অনলাইনে তারকাদের আক্রমণ, তাঁদের খুনের হুমকি, গণধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সায়নী ঘোষ, দেবলীনা দত্ত ও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। সহকর্মীদের উপর হওয়া এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদে পথে নামলেন টলিপাড়ার বিশিষ্টরা। সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ মেট্রো চ্যানেলে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন তারকারা। ছিল না কোনও রাজনৈতিক রং। ওই সভার প্রচার পোস্টারে বলা হয়েছে, সময় এসেছে নতুন এক সকালকে আহ্বান করার। যা কিছু অশুভ, অসুন্দর তাকে প্রত্যাখান করে সুন্দরকে বরণ করার। রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, সুভাষ চন্দ্র, রামমোহনের মাটিতে ফ্যাসিবাদের কোনও জায়গা নেই। এর বিরুদ্ধে বাংলা আগেও লড়ছে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে এবারও লড়বে বাংলা। মহিলাকে অপমান করা, তাঁর সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করা বাংলার সংস্কৃতি নয়। কারও বক্তব্যে বা মতের সঙ্গে অমত পোষণ করা স্বাভাবিক ঘটনা। কোনও অভিনেতাকে পছন্দ না হলে তাঁকে দেখবো না কিংবা তাঁর কথা শুনবো না, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু খুন কিংবা ধর্ষণের হুমকি দেওয়া, এটা স্বাধীন দেশে কাম্য নয়। এই মানসিকতা নিয়েই একজোট হয়েছেন শিল্পীরা। কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শিল্পীদের এই প্রতিবাদ সভা। সভার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার।’ বাকস্বাধীনতার দাবিতে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ চক্রবর্তী, মহিলা কমিশনের অধ্যক্ষা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামীরা। পাশাপাশি মেট্রো চ্যানেলে সোমবারের প্রতিবাদে হাজির হন হরনাথ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, শঙ্কর চক্রবর্তী, সায়নী ঘোষ, সোহিনী সোনগুপ্ত, পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ক সৌমিত্র রায়, সুদেষ্ণা রায়, তথাগত মুখোপাধ্যায়, অভিক মজুমদাররা। শুধু শিল্পীরাই নয়, সাধারণ মানুষকেও এই প্রতিবাদে সামিল হতে দেখা যায়। এত দিনের কর্মজীবনে কখনও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেননি লীনা। কাজের মধ্যে দিয়েই নিজের মত প্রকাশ করেন। এই প্রথম কোনও প্রতিবাদ সভায় যোগ দিচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়ার মতো নয়, তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামছেন লীনা। এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। এদিন কৌশিক সেন বলেন, আমি তৃণমূল, সিপিএম নাকি বিজেপি প্রশ্ন সেটা নয়। কিন্তু যেভাবে সায়নী, দেবলীনা বা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সহ মহিলাদের আক্রমণ করা হচ্ছে এটি ফ্যাসিস্ট শক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নুসরতও এদিন ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি বলেন, আমাদের ভয় করছে। এ কোন কোন ভারতবর্ষে বাস করছি। ধর্ষণ, হুমকি, ট্রোলিং চলতেই থাকছে। আমিও পেয়েছি এই ধরনের হুমকি। বাংলায় ধর্ষণ করে দেখাক। ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেব। সভামঞ্চ থেকে এদিন দেবলীনা প্রশ্ন তুলে দেন, “অপরাধের শাস্তি জেল হতে পারে, ফাঁসি হতে পারে। কিন্তু অপরাধের শাস্তি কি ধর্ষণ হতে পারে?” কিছুদিন আগে গোমাংস নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন দেবলীনা দত্ত। তার পর থেকেই গেরুয়া শিবির থেকে ফেসবুকে একের পর এক আক্রমণের শিকার হন তিনি। তেমনই বেশ কিছু হুমকি বার্তা এদিন মঞ্চে পড়ে শোনান অভিনেত্রী। দেবলীনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করেন বিজেপির সদস্য তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারিও। তাঁর প্রোফাইলেও অভিনেত্রীকে হুমকি দেওয়া হয়। তার মধ্যে একটি কমেন্ট হল, “মমতার পুলিশ অভিনেত্রীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। তাই এরা বেঁচে যাচ্ছে।” দেবলীনা প্রশ্ন তোলেন, “তা হলে কি নিরাপত্তা না থাকলে বাঁচতাম না?” অভিনেত্রী জানান, বাংলার বাইরে অনুষ্ঠানে গেলে বিপদ হতে পারে, এই ইঙ্গিতেও তাঁকে নিশানা করা হয়েছে। অভিনেত্রী এর পরেই সরাসরি বিজেপিকে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এরা ক্ষমতায় আসার আগেই এভাবে ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। তাহলে ভাবুন ক্ষমতায় চলে এলে তো এরা ধর্ষণ করবে।”