রাজ্য জুড়ে চলছে বামেদের ডাক ১২ ঘন্টার বাংলা বন্ধ। সামান্য কিছু জায়গায় বনধের চিত্র ধরা পড়লেও, রাজ্যের বড় একটা অংশ জুড়ে বনধের কোনও অস্তিত্বই চোখে দেখা যাচ্ছে না। তবে শহর এলাকাগুলিতে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে বাম কর্মীসমর্থকদের রেল অবরোধ, রাস্তা অবরোধ, মিছিল ও পিকেটিং। আর এই সব করতে গিয়ে একদিকে যেমন তাঁরা নিজেদের মুখ নিজেরা বেশি করে পোড়াচ্ছে, তেমনি বেআব্রু করে দিচ্ছে তাঁদের সংগঠনের বেহাল দশাও। একদিকে যেমন অবরোধ তুললে পুলিশ গেলে তাদের চকোলেট, মিষ্টি, ফুল দিচ্ছিল বাম সমর্থকরা। তেমনি অন্যদিকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে অবরোধের জেরে পাণ্ডুয়া স্টেশনে আটকে পড়েন কলেজছাত্রী। প্রায় সব জায়গাতেই ১০-১৫ মিনিট বাদে ট্রেনের সামনে থেকে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়েছে। কথাও কোথাও আবার স্থানীয় পুলিশ বা রেলপুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে গিয়েছে। রাস্তাতে অবরোধ অবশ্য এত তাড়াতাড়ি তোলা হচ্ছে না। তবে অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। রাস্তাঘাটে লোকজন অন্যদিনের তুলনায় কম বেড়িয়েছেন। তবে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক। গ্রাম বাংলার দিকে বেসরকারি বাস চলাচল তুলনায় কম থাকলেও হাওড়া-কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় বেসরকারি বাস চলাচল স্বাভাবিকই রয়েছে। অন্যদিনের থেকে রাস্তায় বেশি নেমেছে সরকারি বাস। খুলেছে সব দোকানপাট বাজারহাট। অন্যদিকে এন্টালি থেকে কলেজস্ট্রিট পর্যন্ত ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলে হাঁটছে বাম-কংগ্রেস। মিছিল থেকে জোর করে দোকান বন্ধ, গাড়ি ভাঙচুর করার চেষ্টা করা হয়। প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থকরা জোর করে দোকানের শাটার বন্ধ করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী গিয়ে বাধা দেন।মিছিলে প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীর মতো দুই দলের শীর্ষ নেতারা ছিলেন। এদিন বৈঠকখানা বাজারের কাছে মিছিল পৌঁছতেই গন্ডগোল বাঁধে। জোর করে দোকান বন্ধ, গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা। তাদের দাবি, কংগ্রেসের দলীয় পতাকা হাতে কয়েকজন এই বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে। সিপিএমের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কংগ্রেস। দলের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি মিছিল থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। দলের আরও এক বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রথমে মিছিল থেকে বেরিয়ে গেলেও পরে যোগ দেন। তবে এদিনের ঘটনা যে দুই জোটবন্ধুর কাছেই অস্বস্তির, তা বলার অপেক্ষা রাখল না। বামেদের দাবি তারা বাস বন্ধ, দোকানের শাটার নামানোর মতো কোনও কাজ করছে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মিছিল এগিয়ে যাওয়ার সময় জোর করে দোকানের শাটার বন্ধ করা হয়। বাস আটকে দেওয়া হয়। অন্যদিকে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় অবরোধ করেন বাম কর্মী, সমর্থকরা। আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। পরে পুলিশ কয়েকজন অবরোধকারীকে গ্রেফতার করে। মধ্যমগ্রাম উড়ালপুলের কাছে সোদপুর-বারাসাত রোডে বামেদের অবরোধ। গার্ড রেল সরিয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় বাম কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বাদানুবাদ হয়। আসানসোলে জোর করে অটো থেকে নামানো হল যাত্রীদের। দুর্গাপুরের বাঁকুড়া মোড়ে অবরোধ। স্বাভাবিক বারাকপুর শিল্পাঞ্চল। কোচবিহারে বাস আটকে বিক্ষোভ করায় গ্রেপ্তার করা হয় ৫জনকে। অন্যদিকে চেনা ছন্দে ছিল সল্টলেক সেক্টর ফাইভ। অফিসমুখো আইটি সেক্টরের কর্মীরা। কলকাতায় বনধের ছায়া না পড়লেও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে বনধের খবর। বাম কর্মী সমর্থকরা রেল, সড়ক অবরোধ শুরু করায়। শিয়ালদহ দক্ষিণ, উত্তর ও মেন শাখায় রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। মেদিনপুর, হাওড়ায় চলছে অবরোধ। একইভাবে মধ্যমগ্রাম, বেড়াচাঁপা, কাঁচরাপাড়া, দক্ষিণ বারাসতে বাম কর্মী সমর্থকরা অবরোধ শুরু করেছেন। এদিকে আজই কিনা করোনাকাল কাটিয়ে প্রথম স্কুলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। বনধের জেরে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। দমদম চিড়িয়ামোড় ও বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোড অবরোধ হওয়ায় স্কুলে পৌঁছতে সমস্যায় পড়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। হরতাল ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ অভিভাবকদের। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের মূল গেটের সামনে চলছে ধর্মঘটীদের পিটেকিং। এদিকে বর্ধমানে ITI-এর প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে, বামেদের ধর্মঘটে পাণ্ডুয়া স্টেশনে আটকে পড়েন এক কলেজছাত্রী। রেল অবরোধের জেরে পরীক্ষায় বসতে না পারার ভয়ে স্টেশন চত্বরেই কাঁদতে শুরু করেন তিনি। যদিও পরে তাঁকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে খবর।