সাক্ষী থাকছে কলকাতা, সাক্ষী থাকছে কলকাতার পাশাপাশি তামাম বাংলা ও ভারত। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অভিনব ভাবে ইলেকট্রিক স্কুটিতে সওয়ার হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ছিলেন চালক, এই ভাবেই হাজরা থেকে নবান্ন গিয়েছিলেন মমতা। বিকেলে অপেক্ষা করছিল আরও চমক। যাকে বলে বিরল দৃশ্য। এবার নবান্ন থেকে ই-স্কুটিতে সওয়ার হয়ে নবান্ন থেকে বেরলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু চমক হল, চালক স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথায় নীল হেলমেট পড়ে নিজেই স্কুটি চালিয়ে বেরোলেন। তবে অনভ্যস্ত হাত, তাই দেহরক্ষীরা দুদিক থেকে স্কুটির হ্যান্ডেল ধরলেন। একবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু সামলে নেন দেহরক্ষীরা। রাজনৈতিক জীবনে তৃণমূল সুপ্রিমো যেমন বার বার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, তেমনি নিজেও বহুবার জানিয়েছেন যে তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন। এদিন যেন সেই চ্যালেঞ্জের ছবিই উঠে এল নবান্ন ও বিদ্যাসাগর সেতুর ওপরে। কারন জ্বালানির দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে এদিন সকালে ই-স্কুটি চেপে হাজরা থেকে নবান্নে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে নবান্নে সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রকে বিঁধেছিলেন জ্বালানি ও পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির জেরে। এটা পরিষ্কার যে তিনি স্কুটি চালাতে জানেন না, পুদেহরক্ষীরাও তাঁকে সাহায্য করেছেন। কিন্তু নিজে চালকের আসনে বসে সেই স্কুটি চালিয়ে নবান্ন থেকে বিদ্যাসাগর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের একাংশ পর্যন্ত এসে মমতা এদিন কার্যত বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের চালিকা শক্তি হিসাবে তিনি থাকতে চান আগামী দিনেও। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের মুখে এই ঘটনা তাই যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ। প্রথম দফায় নবান্ন থেকে বিদ্যাসাগর সেতুর একাংশ অবধি পুলিশকর্মীদের সাহায্যে নিজেই স্কুটি চালিয়ে আসেন তিনি। আবার পি জি হাসপাতালের মোড় থেকে ফের স্কুটির চালকের আসনে সওয়ার হন তিনি। আর কলকাতার রাজপথে এই অচেনা মমতাকে দেখতে রীতিমত মানুষের ঢল নামে। তখন তাঁদের সকলের হাতেই মোবাইল। কেউ করছেন ভিডিও কেউ বা তুলছেন ফোটো। কার্যত পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদ যে এভাবেও জানানো যেতে পারে সেটা এদিন আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্কুটার চালিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে ফেরার পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রান্নাঘরে আগুন লাগিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রায় ২ কোটি মানুষ কেরোসিন তেল পাচ্ছে না। যারা পাচ্ছেন, তারা কেরোসিন তেল বাইরে থেকে টাকা দিয়ে কিনছেন। প্রতিদিন একটা করে নেতা আসছেন কিন্তু পেট্রোল ডিজেল এলপিজির দাম কেন বাড়ছে সে বিষয়ে কোনো উত্তর নেই চুপ করে রয়েছে। তাই সবাই বলছে বিজেপিকে চাই না। মানুষের জীবন ছাড়া সব কিছুর দাম বাড়াচ্ছে মোদি সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি করেন মোদি সরকার দ্বিগুণ বাড়িয়েছে এলপিজির দাম। গ্যাসের দাম ৪০০ টাকা করতে হবে। দাম না কমলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামর হুঁশিয়ারি দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা আন্দোলন করছেন, সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামলে মোদি বাবু বুঝতে পারবেন এজেন্সি দিয়ে কিছু হবে না। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে রাজ্য সরকার কেন্দ্র সরকারকে যখন দায়ী করছে তখন গেরুয়া শিবির রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি রাজ্য সরকার যদি পেট্রোপণ্যের ভ্যাটে ছাড় দেয় তাহলে সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হত ।