কলকাতা

কাকে সুবিধা করে দিতে বাংলায় ৮ দফায় ভোট? কমিশনকে প্রশ্ন ক্ষুব্ধ মমতার

“মিস্টার নরেন্দ্র মোদি, মিস্টার অমিত শাহ, আপনাদের বলে দিচ্ছি, বাংলার মানুষ এর জবাব দেবেন! আমিই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এক মহিলাকে এত ভয়?’ খেলা হবেই। হারিয়ে ভূত করে দেব। বাংলাকে অসম্মান করার উত্তর দেবেন মানুষ”

প্রশ্ন যে উঠবেই সেটাই জানা ছিল। কার্যত নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সব থেকে বড় বিষয় বাংলার মতো এত বেশি দফায় ভোট এর আগে দেশের অন্য কোনও রাজ্যে হয়েছে কিনা তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তেমনি প্রশ্ন উঠেছে বাংলার এক একটি জেলাকে যেভাবে ভেঙে ভেঙে ভোট করান হচ্ছে তা কার্যত নজীরবিহীন। এদিন সেই প্রশ্নটাই তুলে ধরলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে নিজের ক্ষোভের কথাও জানিয়ে দিলেন। সোজা বাংলায় প্রশ্ন তুলে দিলেন কমিশনের কাছে, ‘কাদের সুবিধা করে দিতে এভাবে জেলা ভেঙে রাজ্যে ৮ দফায় ভোট নেওয়া হচ্ছে?’ কালিঘাটে এদিন নিজের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা কার্যত নিজের ক্ষোভ উগরে দেন। নজীরবিহীন ভাবে যেভাবে বাংলায় ৮ দফায় ভোট ঘোষণা করা হয়েছে তা নিয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘ভোটের দিনক্ষন কী নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহ ঠিক করে দিয়েছে? এটা লজ্জার যে কমিশন একটি রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। বাংলার সঙ্গে বাকি যে চারটি রাজ্যে ভোট হচ্ছে সেখানেও এত দফায় ভোট করানো হচ্ছে না। তাহলে শুধু বাংলার জন্য কেন ৮ দফায় ভোটগ্রহণ করা হবে? আমাদের শক্ত ঘাঁটি দক্ষিন ২৪ পরগনায় ৩ দফায় ভোট হবে, কেন? কাকে সুবিধা করে দিতে এই সিদ্ধান্ত? এর আগে বাংলায় কোনওদিন জেলাগুলিকে ভেঙে ভেঙে ভোট করানো হয়নি। তবুও কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবো। আর যারা বাংলা দখল করার ছক কষছেন তাঁদের বলে রাখছি যত নেতা আছে সব নিয়ে চলে আসুন, কুছ পরোয়া নেহি। ছাত্র রাজনীতি করে উঠে এসেছি। বাংলাকে সবার থেকে ভাল চিনি। ৮ দফায় ভোটও হবে খেলাও হবে।’ এদিন মমতা বেশ ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘কোথাও কোথাও একটা প্রশ্ন এসে যাচ্ছে। বিহারে ২৪০টি আসনে ৩টি দফায় নির্বাচন হয়েছিল। অসমে ৩ দফায় ভোট হচ্ছে। তামিলনাড়ুতে ২৩৪টি আসনে একদিনেই নির্বাচন। কেরলে সিপিএমের সরকার, সেখানেও এক দফায় ভোট। বাংলার ২৯৪টি আসনে কেন ৮ দফায় ভোট? কাকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য? তারা রাজ্যকে সুবিচার না দিলে কোথায় যাবে জনগণ? আমি অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, বিজেপির অনুরোধেই এটা করা হয়েছে। এমনকি গোটা জেলায় একদিনে নির্বাচন হচ্ছে না। ২৭ মার্চ নির্বাচন করছেন পুরুলিয়ায়। বাঁকুড়াটা ভাগ করেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পার্ট ওয়ান পার্ট টু শেখাচ্ছে। ৩০ দিনের খেলা খেলবেন? আমাদের যায় আসে না। হারিয়ে ভূত করে দেব।’ একই সঙ্গে এদিন মোদি-শাহকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মমতা বলেছেন, ‘আপনারা জেলাকে ভাঙছেন। ভাইকে ভাইকে ভাঙছেন। হিন্দু-মুসলিমকে ভাঙছেন। আপনারা বাঙালি-রাজবংশী ভাঙছেন। আপনারা টোটাল দেশটাকে ভাঙছেন। আমি বাংলার নিজের মেয়ে। আমি বাংলাকে ভালো করে চিনি। জেলা থেকে বিধানসভা কেন্দ্র সব চিনি। বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টার জবাব বাংলার মানুষই দেবে। বহিরাগত গুন্ডারা বাংলা শাসন করবে না। বিজেপির চোখ দিয়ে বাংলাকে দেখবেন না, অনুরোধ করছি নির্বাচন কমিশনকে। ২০১৯ সালে বিবেক দুবে পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনিই ফের পর্যবেক্ষক হলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না করেন। প্রধানমন্ত্রীকেও তাই বলছি। বিজেপির সবাই মিলে মনে করে, বাংলাকে নিগৃহীত করব! বাংলাকে বঞ্চনা করব! যত নেতা আছে নিয়ে আসুন। ন্যাতা ও নেতা। আমরা নেতা নই, ন্যাতা। আমরা ধানক্ষেতের লোক। ঘরে কাজ করার লোক। এর জন্যে জবাব দিতে হবে। এত ভয় আমাকে! মমতার মন্তব্য, ‘‘মিস্টার নরেন্দ্র মোদি, মিস্টার অমিত শাহ, আপনাদের বলে দিচ্ছি, বাংলার মানুষ এর জবাব দেবেন! আমিই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এক মহিলাকে এত ভয়?’’ এক জন মহিলাকে এত ভয় যে বাইরে থেকে নেতা আনতে হচ্ছে! যতই ইচ্ছা নেতা আনুক। আমরা নেতা নই, ঘর মোছার ন্যাতা। খেলা হবেই। হারিয়ে ভূত করে দেব। বাংলাকে অসম্মান করার উত্তর দেবেন মানুষ।’’পুরো কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত সংস্থাকে নিয়ে এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে। নির্বাচনের পর পুরস্কার দিতে হবে।’ তবে বিরোধীরা বিশেষ করে বিজেপির নেতারা কমিশনের ৮ দফার ভোটের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাম ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।