‘কলকাতায় বসে চক্রান্ত করছেন অমিত শাহ’, সভা থেকে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী
এদিন বাঁকুড়ার মেজিয়াতে দলের হয়ে সভা করতে গিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ঘিরে অমিত শাহকে এভাবেই আক্রমণ শানেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সভায় লোক আসছে না। তাই কী জমি আন্দোলনের লড়াইকে কালিমালিপ্ত করতেই এখন আন্দোলনকারীদের নামে কুত্সা করছেন। নন্দীগ্রামে যাঁরা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এখন মামলা করা হচ্ছে। হোম মিনিস্টার কলকাতায় বসে পরিকল্পনা করা করছেন, কাকে গ্রেফতার করা হবে, কাদের পিছনে ইডি-সিবিআই লাগানো হবে। নির্বাচন কমিশন অমিত শাহ চালাচ্ছেন না তো? আমরা চাই নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। কিন্তু অমিত শাহ নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করুক, এটা আমরা কিছুতেই মানব না। বন্যা হলে আসে না, ঝড় হলে আসে না, কোভিড হলে আসে না। আর নির্বাচনের সময় আসলে বলে বাংলা চাই।’ প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের জামিন নাকচ করে দিয়েছে হলদিয়া মহকুমা আদালত। শুধু তাই নয় আদালত আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছে। আর তার জেরেই রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের মুখে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম আবু তাহের, সেখ সুফিয়ান, স্বদেশ দাসের মত প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতারির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদের মধ্যে সেখ সুফিয়ান আবার এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট। এই অবস্থায় এদিন মমতা মেজিয়া থেকে সরাসরি এই নিয়ে আক্রমণ শানেন অমিতকে। এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন সেখ সুফিয়ানও। তিনি বলেছেন, ‘আইন সকলের জন্যই সমান। আমরা আইন মেনেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে বিজেপির আসল রূপ বের হতে শুরু করেছে। সিপিএম জমি আন্দোলনকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আর এবার বিজেপি নন্দীগ্রামের মানুষকে অপমান করল। বিজেপি যে কোনওদিনই নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকে সমর্থন করেনি এটাই তার প্রমাণ। আইন মেনেই আমরা লড়ব। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাব।’ তবে মুখ্যমন্ত্রী এদিন মেজিয়া থেকে অনান্য বেশ কিছু বিষয় নিয়েও সরব হন। বলেছেন, ‘সারা ভারতে বিজেপির জমানায় পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোয় সমস্যা বাড়ছে। আপনারা বিজেপিকে বলুন, আমরা বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। আপনারাও বিনা পয়সায় গ্যাস দিন। কেন দেবেন না। আপনাদের হাতে গ্যাস রয়েছে। আজ থার্মাল পাওয়ার, ব্যাঙ্ক, রেল, বিমাকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে ব্যাঙ্কে টাকা রেখেও আপনারা ফেরত পাবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। একটা করে ভোট, একটা খেলা। ২৭ তারিখ কিন্তু খেলা খেলতে হবে। বিজেপি ভেবেছে আমার একটা পা ভেঙে দিলে সুবিধা হবে। কিন্তু মনে রাখবেন, সুস্থর চেয়ে আহত বাঘ আরও ভয়ঙ্কর। আমার মা-বোনেদের দুটো পা আছে, তাঁদের পায়ে দাঁড়াব। আমরা ছাত্র-যৌবনের দুটো পা, তাঁদের পায়ে দাড়াব।তিনি এও বলেন, ‘মা-বোনেরা তৈরি থাকুন। আমার মা বোনেরা যেমন রাঁধে তেমন চুলও বাঁধে। লুঠেরারা লুঠ করতে এলে হাতা, খুন্তি, উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, ধামসা-মাদল, ঝুমুরনাচ, বিষ্ণুপুরী ঘরানার গানকে শক্তিশালী করুন। মিটিংইয়ে লোক হচ্ছে না আর সারা রাত বসে চক্রান্ত করছে।মানুষ সঙ্গে নেই বলে আমায় খুন করতে হবে? আমায় খুন করলে আরও গোল্লা পাবে। খেলা হবে। কন্যাশ্রীরা খেলবে, যুবশ্রীরা খেলবে, রুপশ্রী খেলবে, কৃষক, মজুর, পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটি ছাত্র-যৌবন সবাই খেলবে। আমি এক পায়ে খেলব। খেলা হবে, জেতাও হবে। এই যুদ্ধে বাংলা জিতবে, দিল্লি হারবে। ছাত্র-যুবদের দুটো পা তাদের সাপোর্টে খেলব। শ্রমিক-কৃষকদের দুটো পা, তাদের সাপোর্টে খেলব। আমি চাই এই নির্বাচনী যুদ্ধে মা-বোনেরা সামনে থাক। তফশিলীরা সামনে থাক। আগামী নির্বাচনে সমস্ত আসন থেকে বিজেপিকে করতে হবে খালি।