রেলিং টপকে যমুনায় স্নান করতে যাওয়ায় বাধা দিয়েছিল পুলিশ। এই ছিল প্রশাসনের ‘অপরাধ।’ আর এই ‘অপমান’-কে ঘিরেই শনিবার দিনভর মথুরার কুম্ভ চত্বরে দফায় দফায় পুলিশকে যথেচ্ছ পেটাল রাজ্যের শাসক দল বিজেপি এবং আরএসএস কর্মীরা। কয়েকটি জায়গায় কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিলেন নেতারাও। কোথাও সঙ্ঘ-কর্মীর ‘অপমান’ এবং পুলিশের ‘দুঃসাহসে’ ক্ষুব্ধ বিজেপি নেত্রী পা থেকে চটি খুলে প্রকাশ্য রাস্তায় পেটালেন পুলিশকর্মীকে। কোথাও ভিড়ের মধ্যে থেকে পুলিশের মাথায় হেলমেট দিয়ে মারাও হল একাধিক বার। পুলিশকে মারধরের সঙ্গে সঙ্গেই ভিড়ের মধ্যে থেকে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তোলেন বিজেপি-আরএসএস সমর্থকরা। ভিড়ের মধ্যে অন্য পুলিশ কর্মীরা থাকলেও তাঁদের বেশির ভাগই সহকর্মীকে মার খাওয়া থেকে বাঁচাতে এবং ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের বোঝাতেই ব্যস্ত থাকলেন। একজন তো পুলিশ পেটানো দেখতে জমা হওয়া ভিড় ঠেকাতে রীতিমতো ঘনঘন বাঁশি বাজিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে গেলেন। পরে বিজেপি সমর্থকদের শান্ত করতে তাঁদের দাবি মেনে আরএসএস প্রচারককে ‘খুনের চেষ্টা’র অভিযোগ আনা হয়েছে চার পুলিশের বিরুদ্ধে! পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যমুনায় স্রোতের কারণে স্নানের ঘাটের পথে রেলিং দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। সেই রেলিং টপকেই নদীতে স্নানের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন এক আরএসএস নেতা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা তাঁকে বাধা দেয়। পুলিশের এই ‘অপরাধ’ সামান্য মনে হয়নি সেখানকার বিজেপি ও সঙ্ঘ কর্মীদের। দল বেঁধে তাঁরা থানায় পৌঁছন এবং কোতয়ালি থানার সামনেই রাস্তার উপরে চড়াও হন পুলিশের উপরে। শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে সব জায়গাতেই। পরে খবর পয়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী আসে। শনিবার যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মথুরায় সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থক এবং বিজেপি কর্মীদের হাতে পুলিশের এই রকম গণপিটুনি খাওয়া রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাকেই প্রশ্নের মুখে তুলে দিয়েছে। পুলিশ অবশ্য শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়ার পরেও পাল্টা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বিজেপি-আরএসএস কর্মীদের এই তাণ্ডবে কিছুক্ষণ পরেই যোগ দেয় আর এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরাও। সব মিলিয়ে শনিবার দিনভর এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে থাকে উত্তরপ্রদেশ।