জেলা

এটা গণহত্যা, তথ্য লোপাটের জন্য আমাকে আটকে দেওয়া হল: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

‘আমাকে যেতে না দেওয়ার জন্য আইন করেছে , আধা সেনাকে ক্লিনচিট দেওয়া হচ্ছে’

কোচবিহারে না যেতে পারার জন্য আজ সকালে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনকে ফের আক্রমণ করলেন তিনি ৷ বললেন, কোচবিহারের ঘটনা আসলে গণহত্যা ৷ তথ্য লোপাটের জন্যই তাঁকে ৭২ ঘণ্টা আটকে দেওয়া হয়েছে ৷ আর কোচবিহারের এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ কালো দিন ঘোষণা করেছেন তিনি ৷ “শীতলকুচিতে গণহত্যা হয়েছে৷ তারা পায়ের নিচে গুলি করতে পারত ৷ কিন্তু বুক ও গলা লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে ৷ আর এই ঘটনায় তথ্য চাপা দিতেই ৭২ ঘণ্টার জন্য আমাকে আটকে দেওয়া হয়েছে ৷ নির্বাচন কমিশন যা করছে তা নজিরবিহীন ৷ নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ আমাকে যেতে না দেওয়ার জন্য আইন করেছে ৷ আধা সেনাকে ক্লিনচিট দেওয়া হচ্ছে ৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, এত রক্ত আমার মন ভারাক্রান্ত করে দিয়েছে ৷ তাই আজ আমি কালো দিন ঘোষণা করছি ৷ ” এদিন শিলিগুড়ির সিন্ডরেলা হোটেল থেকে সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমসিসি মানে মডেল কোড অফ কনডাক্ট এখন বিসিসি অর্থাত্‍ বিজেপি কোড অব কনডাক্ট হয়ে গিয়েছে। আমি শীতলকুচি যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাধা দেওয়া হল। তবে এভাবে আমাকে আটকানো যাবে না। আমি ১৩ তারিখ আবার উত্তরবঙ্গ আসব। ১৪ তারিখ শীতলকুচি যাব। মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করব আমি। ওই পরিবারগুলিকে সব রকমের সাহায্য করা হবে। আমি যে ভাবে পারি সাহায্য করব। দলের তরফে ফান্ড তৈরি করা হবে। প্রত্যেকে তাতে ১০০ টাকা দেবেন। সেই অর্থ তুলে দেওয়া হবে মৃত ও আহতদের পরিবারের হাতে। ভোট চলাকালীন রাজ্য সাহায্য করতে পারে না। সেই কারণে রাজ্যের তরফে কমিশনের কাছে সাহায্যের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সে বিষয়ে জানানো হবে। আমাকে আটকাতেই ওখানে কাউকে না যেতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গুলিকাণ্ডের পরে তথ্য লুকোতে ৭২ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা। যেখানে নির্বাচন শেষ সেখানে কেন আমি যেতে পারব না। একটু গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করতে পারব না। আমি যদি সামনে গিয়ে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারতাম, একটু বাচ্চাকে কোলে তুলে নিতে পারতাম, তাহলে অসুবিধা কী? এ ভাবে কী আটকানো যায়? যে ভাবে নন্দীগ্রাম জেনোসাইড হয়েছিল, এটাও জেনোসাইড। গুলি করতে হলে কোমরের নীচে করতে হয়, প্রত্যেকটা গুলি গলায় বা বুকে লেগেছে। গুলি স্প্রে করেছে। এরা মিষ্টি মুখে খুন করতে পারে, রসগোল্লা খেতে খেতেও।’ বৈঠক চলাকালীন সময়েই মমতা যোগাযোগ করেন, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে। প্রথমে তিনি ভিডিও কলে নিহত মনিরুজ্জামান মিয়াঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সেই কল শেষে বলেন, ‘মনিরুজ্জামানের ৪৫ দিনের একটি সন্তান আছে। স্ত্রী, বাবা-মা এবং ছোট ভাই রয়েছে। মনিরুজ্জামান রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ভোটের জন্য কেরল থেকে বাড়ি এসেছিলেন। বুথের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। কোথা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। আমরা এর বিচার চাই। ওনার পরিবারকে সব রকম সাহায্য করা হবে। এখন যেতে পারছি না। কিন্তু আমি যাব। ওনাদের সঙ্গে দেখা করব।’ এরপরে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন নিহত হামিদুল মিয়াঁর দাদার সঙ্গে। তারপর জানান, ‘হামিদুলের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। একটি তিন বছরের কন্যাও রয়েছে। হামিদুলও রাজমিস্ত্রির কাজ করত। ওর মৃত্যুতে ওরা কার্যত দিশাহারা। ওখানে গিয়ে ওনাদের সঙ্গেও দেখা করব। যা বিচার চাওয়ার চাইব।’

গতকাল ভোট চলাকালীন শীতলকুচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় চারজনের ৷ এই ঘটনার পর আগামী ৭২ ঘণ্টা কোচবিহারে রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশ নিষেধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন ৷ এদিকে, আজই কোচবিহারে যাওয়ার কথা ছিল মমতার ৷ শীতলকুচির ব্লকে ব্লকে প্রতিবাদ মিছিল করার কথা ছিল তাঁর ৷ কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের কারণে সব কর্মসূচি বাতিল করে দেওয়া হয় ৷