জনসভায় তাঁকে কপালে গুলি করে খুনের ছক ছিল ৷ কিন্তু টেবিলের উপর প্লেটে রাখা মিষ্টি খেতে সামনের দিকে ঝুঁকতেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি বেরিয়ে যায় কানের একটু নিচ দিয়ে ৷ কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যান মালদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা ৷ দলীয় প্রার্থীকে খুনের জন্য ৫০ লক্ষের সুপারি দিয়েছিলেন পুরাতন মালদার বিজেপি নেতা নিতাই মণ্ডল ৷ প্রাথমিক তদন্তে তা জানতে পেরেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ গোটা ঘটনার পিছনে ছিল অনেক বড় ছক ৷ ধৃত নিতাই মণ্ডল এদিন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগকে তৃণমূল ও প্রশাসনের যোগসাজশ বলে দাবি করেছেন ৷ যদিও জেলা বিজেপি সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “এটা ঘৃণ্যতম অপরাধ ৷ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় ৷ পুলিশ তার নিজের কাজ করবে ৷” কিন্তু দলীয় প্রার্থীকে খুন করানোর মতো চক্রান্ত কেন করতে গেলেন নিতাইবাবু ৷ তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরাতন মালদা ব্লকে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা করার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে নিতাইবাবুরই ৷ তিনি ভেবেছিলেন, দল তাঁকে এই পরিশ্রমের মূল্য দেবে ৷ মালদা কেন্দ্রে তাঁকেই প্রার্থী করা হবে ৷ কিন্তু এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব গোপালচন্দ্র সাহার নাম ঘোষণা করায় তাঁর স্বপ্ন ভাঙে ৷ দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তিনি ৷ তখনই তিনি যোগাযোগ করেন তাঁর ভাইপো আকাশ মণ্ডলের সঙ্গে ৷ বয়স মাত্র ১৯ বছর হলেও আকাশ সাহাপুর এলাকার কুখ্যাত সমাজবিরোধী ৷ এর আগেও সে একাধিকবার জেল খেটেছে ৷ মদ্যপান-সহ যাবতীয় নেশা রয়েছে তার ৷ মার্চ মাসে এলাকারই একটি নেশা মুক্তি কেন্দ্রে তাকে রাখা হয়েছিল ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, গোপালবাবুকে খুন করার জন্য নিতাইবাবু আকাশের সঙ্গে কথা বলেন ৷ তিনি তাকে জানান, এর জন্য তিনি ৫০ লক্ষ টাকার সুপারি দিতে রাজি ৷ এরপরই আকাশ তার পুরোনো সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে সাহাপুর বাগানপাড়ার বাসিন্দা বিট্টু মজুমদার ৷ এভাবেই একজোট হয় ছ’জন ৷ সবাই সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা ৷ এরপর যোগাযোগ করা হয় কালিয়াচকের শার্প শ্যুটার সাহেব ঘোষের সঙ্গে ৷ সে রাজি হয় ৷ কিন্তু গোপালবাবুকে খুন করার তেমন সুযোগ পাচ্ছিল না তারা ৷ শেষ পর্যন্ত নিতাইবাবুই তাদের জায়গা বাতলে দেন ৷ ঠিক হয়, 18 এপ্রিল সাহাপুরে ঝন্টু মোড়ে গোপালবাবুকে দলীয় কার্যালয়েই গুলি করা হবে ৷ সেদিন তাঁর ওই কার্যালয়ে সভা করার কথা ছিল ৷ এলাকার রাস্তাঘাট চেনা থাকায় গুলি করার পর পালাতেও সুবিধে হবে ৷ অপারেশন সফল করতে ওই এলাকায় কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার ছকও কষেন নিতাইবাবু ৷ নির্দিষ্ট দিনে সভাস্থলে হাজির হয় সাতজনই ৷ ঠিক ছিল গোপালবাবুকে প্রথমে গুলি করবে সাহেব ৷ তার নিশানা ফসকালে দ্বিতীয় গুলি চালাবে বিট্টু ৷ কোনও গোলমাল হলে এই দু’জনকে উদ্ধার করার দায়িত্বে ছিল বাকি পাঁচজন ৷ তারাও ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল ৷ সাহেবের নিশানাও ছিল অব্যর্থ ৷ গোপালবাবুর কপাল লক্ষ্য করেই গুলি চালায় সে ৷ ঠিক সেই সময়ই গোপালবাবু সামনের প্লেটে থাকা মিষ্টি খেতে একটু ঝুঁকে পড়েন ৷ সেকারণেই গুলি লাগে তাঁর ডানদিকের কানের নীচে ৷ গুলি তাঁর মেরুদণ্ড ঘেঁষে থেমে যায় ৷ এতে মেরুদণ্ডে সামান্য আঘাত ছাড়া আর কিছু হয়নি তাঁর ৷ স্পাইনাল কর্ডেও আঘাত লাগেনি ৷ এদিকে গুলি চালিয়ে সবাই পালিয়ে যেতেই এলাকায় ফের বিদ্যুৎ ফিরে আসে ।