বাংলার মানুষের রায়ে ফের ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরেই গতকাল তিনি ডাক দিয়েছেন তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের ঘরে ফিরে আসার। যদিও সংশয় রয়েছে সবাই তৃণমূলে ফিরতে চাইলেও তাঁদের আর তৃণমূলে ফেরানো হবে কিনা তা নিয়ে। তবে মমতার ঘোষণায় এখন রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি। কেননা দলবদলুদের কাউকে ফেরানো হোক বা না হোক, কেউ ফিরতে চান বা না চান, বিজেপির টিকিটে জেতা অনেক বিধায়কই যে এবার তৃণমূলের পথে পা বাড়াবেন সেই ইঙ্গিত মিলতে শুরু করে দিয়েছে। আর তার জেরেই রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যারা দলে ফিরতে চাইবেন তাঁরা স্বাগত। কার্যত সেই বার্তার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন ভোটের মুখে যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন সেই সব নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কেরা এবারে বোধহয় ফের তৃণমূলে ফিরে আসবেন। সত্যিই কী তাই? তৃণমূল শিবিরে কান পাতলে কিন্তু দলনেত্রীর মন্তব্যের ভিন্ন ব্যাখাই শোনা যাচ্ছে। ঘাসফুল নেতাদের দাবি, দলনেত্রী ডাক দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সবার জন্য আর উন্মুক্ত নয় দলের দরজা। নীচুতলার যে সব নেতাকর্মীরা দল ছেড়েছিলেন, তাঁরা যদি ফিরতে চান তাহলে তাঁদের ফেরানো হতে পারে। তবে তার জন্য দলীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। তাঁদের ফেরানোর আগে স্থানীয় নেতৃত্বের মতামত নেওয়া হবে। ব্লক ও জেলা স্তরের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। দল ছেড়ে দলের বিরুদ্ধে কে কী করেছেন, বলেছেন সে সব জিনিসও দেখা হবে। আর দলের কোনও প্রাক্তন নেতা, জনপ্রতিনিধি বা মন্ত্রী ফিরতে চাইলে তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে, তবে সেই কাজ করবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এইসবের মাঝে এখন বিজেপির চাপ জয়ী বিধায়কদের ধরে রাখা। এই প্রথম বাংলায় একসঙ্গে ৭৭জন বিধায়ক পেয়েছে বিজেপি। আগামী দিনে এরা সবাই যে বিজেপিতেই থাকবেন এমন আশা করছেন না শাহ-দিলীপ-নাড্ডারাও। সূত্রের খবর, ১৭জন বিজেপি বিধায়ক আগামী ২ মাসের মধ্যেই নাম লেখাতে পারেন তৃণমূলে। আর এই ভাঙনের আশঙ্কাই এখন রাতের ঘুম কেড়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। এমনিতেই বিজেপির নেতারা এখন সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন প্রকাশ্যে দলবদলু নেতাদের জন্যই দলের বিপর্যয় হয়েছে নির্বাচনে। কার্যত ভোটের ফল বার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপিতে কোনঠাসা হতে শুরু করে দিয়েছেন এই দলবদলু নেতারা। আগামী দিনে বিজেপি যদি এদের ঝেড়ে ফেলেও দেয় তাহলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। কিন্তু বিজেপির টিকিটে প্রথমবার যারা জিতেছেন তাঁদের অনেকেই এখন জার্সি বদলাবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। কেননা শাসকের সঙ্গে দোস্তি না থাকলে এলাকার উন্নয়নে যেমন কিছু করা যাবে না তেমনি নিজেরাও অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন। তাই ফলাফল সামনে আসতেই এবার শুরু হয়ে গিয়েছে শাসকের সঙ্গে তলায় তলায় যোগাযোগ। জার্সি বদল শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর তাতেই চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি।