করোনা প্রতিরোধে পরজীবীনাশক বা অ্যান্টি-প্যারাসাইট ওষুধ আইভারমেকটিন ব্যবহারে ছাড়পত্র দিল গোয়া সরকার। প্রোফাইল্যাকটিক বা প্রতিরোধী ওষুধ হিসেবে ১৮ বছরের উর্ধ্বে সকলকে আইভারমেকটিনের ৫টি ট্যাবলেট খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়। গোয়ার স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এই ওষুধের কোর্স আগে থেকে করা থাকলে করোনা সংক্রমণ চট করে ধরতে পারবে না। সংক্রমণজনিত জটিল রোগ বা ভাইরাল জ্বরের শঙ্কাও কমবে। করোনা থেরাপিতে যে ৭০টি ওষুধের সলিডারিটি ট্রায়াল চলছিল তার মধ্যেই ছিল আইভারমেকটিন। এতদিন এই ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছিল ভারত সহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে। সংক্রামক রোগ সারাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নির্ধারিত জরুরি ওষুধের তালিকাতেও আইভারমেকটিনের নাম আছে। তবে করোনা সারাতে আইভারমেকটিন কতটা কার্যকরী সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি হু। গত বছর মার্চ মাসে হু বলেছিল, করোনা রোগীদের ওপরে আইভারমেকটিনের কতটা কাজ করছে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আরও বেশি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরেই সেটা ভালভাবে বোঝা যাবে। হু আরও জানায়, বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনা রোগীদের ওপর আইভারমেকটিন ওষুধের কন্ট্রোলড ট্রায়াল করা হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছিল, এই ওষুধ সংক্রমণজনিত জটিল রোগ কতটা সারাতে পারে, হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের মৃত্যুহার কমাতে পারে কিনা অথবা এই ওষুধ খাওয়ানোর পরেও মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন সাপোর্ট লাগছে কিনা রোগীর। তবে ট্রায়াল ডেটায় এত কিছু তথ্য সে সময় পাওয়া যায়নি। তাই করোনা প্রতিরোধে রেমডেসিভির বা কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধের মতো আইভারমেকটিনকেও কার্যকরী বলতে পারেনি হু। গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিত্ রানে বলেছেন, দেশে এখন অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির, ফ্যাভিপিরাভির, টোসিলিজুমাবের ঘাটতি রয়েছে। সেই জায়গায় বিকল্প হতে পারে পরজীবীনাশক আইভারমেকটিন ওষুধ। গত বছর প্রোফাইলঅ্যাক্সিস (সংক্রমণ এড়াতে রক্ষাকবচ) হিসেবে হাইড্রক্সোক্লোরোকুইনের বদলে আইভারমেকটিনের ব্যবহার করা যায় কিনা সে নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছি। এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছিল নানা জায়গায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ১৮ বছর হয়ে গেলে আইভারমেকটিনের ওষুধের কোর্স করানো যেতেই পারে। ১২ মিলিগ্রাম করে পাঁচদিন ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। দাবি, এতে শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হবে। সংক্রমণজনিত জটিল রোগের আশঙ্কা কমবে।
🔴 আইভারমেকটিন: প্যারাসাইটের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এই ওষুধের থেরাপি করেন ডাক্তাররা। কৃমি, উকুন, হিটওয়ার্ম, হুইপওয়ার্ম, রিভার ব্লাইন্ডনেস ইত্যাদি পরজীবী ঘটিত রোগের চিকিত্সায় এই ওষুধের থেরাপি করা হয়। আইভারমেকটিন বহু পুরনো ওষুধ। ১৯৭৫ সালে তৈরি হয়েছিল। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি ওষুধের তালিকায় এই ওষুধটিও ঢুকে পড়ে। মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই ওষুধকে অ্যান্টিপ্যারাসাইট এজেন্ট বলে উল্লেখ করেছে। করোনায় কীভাবে কাজে আসতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি বা প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতা আটকাতে যেমন হাইড্রক্সোক্লোরোকুইন ওষুধ বেছে নেওয়া হয়েছিল, আইভারমেকটিনের কাজও অনেকটা তেমনই। প্যারাসাইট বা পরজীবীর সংক্রমণ যেমন ঠেকাতে পারে তেমনই কিছুক্ষেত্রে ভাইরাস প্রতিরোধী হিসেবেও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি। ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, জাপান, আমেরিকায় এই ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে। মার্কিন এফডিএ তাদের একটি প্রতিবেদনে বলেছিল, এই ওষুধ ভাইরাসকে কোষের নিউক্লিয়াসে ঢুকতে বাধা দেয়। কোষের দুটি অংশ আছে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম। সার্স-কভ-২ ভাইরাস সাইটোপ্লাজমে গিয়ে তাদের প্রতিলিপি তৈরি করতে শুরু করে। ফলে তীব্র প্রদাহ তৈরি হয় কোষে। সাইটোকাইন স্টর্মের যা অন্যতম বড় কারণ। এরপর ভাইরাসের লক্ষ্য হয় কোষের নিউক্লিয়াসে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করা। আলফা ও বিটা-১ ট্রান্সপোর্টার প্রোটিন ভাইরাসকে নিউক্লিয়াসে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এই নিউক্লিয়াসে থাকে ডিএনএ, যার মধ্যে জিনের তথ্য লুকিয়ে থাকে। কোষের নিউক্লিয়াস সংক্রমিত হওয়া মানে যাবতীয় তথ্য আর কোষে কোষে পৌঁছতে পারবে না। ফলে ভাইরাস প্রতিরোধী রক্ষাকবচ তৈরি হবে না দেহকোষে, শরীরের ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে পড়বে। আইভারমেকটিন ওই দুই ট্রান্সপোর্টার প্রোটিনকে আটকে দেয়। ফলে তারা আর ভাইরাসকে কোষে বয়ে নিয়ে যেতে পারে না। এই ওষুধ ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করবে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।