বুধবার দুপুরের মধ্যে দিঘা-পারাদ্বীপের মাঝখানে ওড়িশার বালেশ্বরে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় যশ। তার কী ভয়াবহতা হতে পারে এদিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে সে ব্যাপারেই রাজ্যবাসীকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে রাজ্য সরকার ইয়াস মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ করেছে, ঝড় হয়ে যাওয়ার পর যে অভিঘাত তৈরি হবে তার জন্যই বা রাজ্য সরকারের কী পরিকল্পনা তাও এদিন বিশদে ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা বলেন, ‘একটা সিভিয়ার সাইক্লোনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৭২ ঘণ্টা এটা চলার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের রাজ্যের ২০টি জেলায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এটা আমফানের থেকেও বড় হতে চলেছে।’ প্রসঙ্গত আমফানের প্রভাব পড়েছিল উপকূলবর্তী বাংলার তিন জেলা ও দক্ষিণ বঙ্গে। নদিয়ার পর থেকে তেমন বড় কোনও প্রভাব দেখা যায়নি। কিন্তু বাংলার ২০টি জেলায় যদি ইয়াস তাণ্ডব চালায় তাহলে বুঝতে হবে কতটা বিধ্বংসী হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মোট ১০ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। ইতিমধ্যেই সেই কাজ যলছে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় শুরু হয়ে গিয়েছে। ইয়াস মোকাবিলার জন্য ৫১টি বিপর্যয় মোকাবিলা দল গড়েছে রাজ্য সরকার। তারা ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী এলাকা সহ জেলাগুলিতে পৌঁছে গিয়েছে।
মোট ৪০০ সাইক্লোন শেল্টারে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোভিডের সময়ে সেওসব শেল্টারগুলিতে যাতে দূরত্ব বিধি বজায় থাকে তা নিশ্চিত করার বিষয়েও এদিন জেলা প্রশাসনগুলির উদ্দেশে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। আমফানের পর দেখা গিয়েছিল শহর কলকাতা কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সে বীভত্স চেহারার স্মৃতি এখনও টাটকা। পানীয় জলের সঙ্কট, বিদ্যুত্হীন হয়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছিল মানুষকে। জেলাগুলির পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়ঙ্কর। কোথাও কোথাও ১০-১২ দিন বিদ্যুত্ সংযোগ ছিল না। সে সময় কলকাতা থেকে শহরতলিতে গণ বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে ফেলেছিল। হতে পারে সে কথা মনে করেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিপর্যয়ের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। সবাইকে অনুরোধ করবো একটু ধৈর্য্য ধরবেন।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সামাজিক সংগঠন, ক্লাব, এনজিও, পুজো কমিটিগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মমতা আরও জানিয়েছেন, বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তা পুনর্বহালের জন্য ১০০০টি দল, টেলিকম পুনর্বহালের জন্য ৪৫০ টি দল তৈরি রাখা হয়েছে। আমফানের রাতেও নবান্নের কন্ট্রোল রুমে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।