উইন্ডোজ ১০ লঞ্চ হওয়ার প্রায় ছয় বছর পর উইন্ডোজ ১১ নিয়ে হাজির হল মাইক্রোসফট। ২৪ জুন এই আপগ্রেডেড অপারেটিং সিস্টেম লঞ্চ করা হল কোম্পানির তরফে। পরবর্তী প্রজন্মের এই অপারেটিং সিস্টেম ইতিমধ্যেই চলে এসেছে স্টার্ট মেনু সেন্টারে। উইন্ডোজ ১১-এর ডিজাইনে বড়সড় পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে একদিকে যেমন উইজেটসও রয়েছে, আর একদিকে ঠিক তেমনই আবার ম্যাকওয়েস-এর মতো নীচের দিকে ডার্ক বার দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে লুকের দিক থেকেও নজরকাড়া হয়েছে উইন্ডোজ ১১। কোম্পানির তরফে দাবি করা হচ্ছে যে, উইন্ডোজ ১১ ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ অর্থাৎ পার্সোনাল কম্পিউটারের জগৎে আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে চলেছে। আর সেই কারণেই এদিন সান ভ্যালি থেকে উইন্ডোজ ১১ লঞ্চ করার সময় মাইক্রোস্ফটয়ের সিইও সত্য নাদেলা বলেন, ‘উইন্ডোজ ১১ নিয়ে এসে আপনাদের সামনে আমরা যা করে দেখালান, তাতে আমি খুবই আনন্দিত। গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আমাদের এই পদক্ষেপ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ সমস্ত উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যেই নিজেকে উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করিয়ে নিয়ে পারবেন। চলতি বছরের শেষ (বড়দিনের ছুটি) থেকেই গ্রাহকেরা ব্যবহার করতে পারবেন এই নতুন অপারেটিং সিস্টেম। যদিও, সামনের সপ্তাহ থেকেই টেস্টের জন্য উপলব্ধ হবে উইন্ডোজ ১১।
মাইক্রোসফটের এই আপগ্রেডেড অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে একাধিক তথ্য জেনে নেওয়া যাক —
এখনও পর্যন্ত এত অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এসেছে মাইক্রোসফট। কিন্তু, তাদের সবার থেকে উইন্ডোজ ১১-এর একপ্রকার আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে। ডিজাইন থেকে শুরু করে ফিচার্স – উইন্ডোজ ১১ অন্যান্য অপরেটিং সিস্টেমগুলির থেকে সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা। মাইক্রোসফ্টের তরফে এদিন বলা হয়েছে যে, বছর শেষের ছুটির সময় অর্থাৎ বড়দিনের ছুটিতেই পার্সোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ ট্যাবলেট – সব কিছুর জন্যই রোলআউট করা হবে উইন্ডোজ ১১। অর্থাৎ, বড়দিনের সময় থেকেই এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন ইউজারেরা। যদিও কোম্পানির তরফে নির্দিষ্ট করে কোনও দিনের উল্লেখ করা হয়নি। আর এই অপারেটিং সিস্টেম একবার রোলআউট হয়ে গেলেই, Dell, HP, Asus, Lenovo-সহ আরও একগুচ্ছ অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারাদের (OEM) ডিভাইসের জন্য উপলব্ধ করা হবে। যখন আপনার ডিভাইসে উইন্ডোজ ১১ আপডেট করবেন, তখন যেমন নতুন থিম পাবেন, তেমনই আবার গ্রাফিক্সও পেয়ে যাবেন। টাস্কবারে পরিবর্তন করা হয়েছে। তাতে, আইকনকে এক্কেবারে সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। ফাইল ম্যানেজমেন্টের জন্য এই অপারেটিং সিস্টেমে নতুন ফিচার্স দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গেই আবার উইন্ডোজ হ্যালোরও লুকে পরিবর্তন করা হয়েছে। ফাইলস সরিয়ে দিয়ে স্টার্ট মেনু নিয়ে আসা হয়েছে সামনে। রিসেন্ট ফাইল নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্য জায়গায়। তবে, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার্স হল, ফোনের সঙ্গে এর কানেক্টিভিটি এক্কেবারে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সমস্ত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ কম্পিউটার থেকেই ব্যবহার করতে পারবেন। তার ফলে, আপনার ফোনের সমস্ত কাজ আপনি উইন্ডোজ ১১-এর সাহায্যে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ থেকেই করতে পারবেন। মাল্টি টাস্কিংয়ের জন্য উইন্ডোজ ১১-এ দেওয়া হয়েছে একটি স্ন্যাপ লে-আউট। এর সাহায্যে ইউজারেরা কম্পিউটারের একটা স্ক্রিনেই যে কোনও এবং একসঙ্গে যতখুশি ডিভাইস চালাতে পারবেন। এখনও পর্যন্ত এই ফিচার আর অন্য কোনও অপারেটিং সিস্টেমে দেয়নি উইন্ডোজ। আবার, অ্যাপসের কালেকশনের জন্য স্ন্যাপগ্রুপও দেওয়া হয়েছে, যেটি টাস্কবার থেকেই অ্যাকসেস করা যাবে। এছাড়াও এই অত্যাধুনিক অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে একটি কম্পিউটারকে দ্বিতীয় কোনও কম্পিউটারের সাহায্যে কানেক্ট করাও খুব সহজ হয়ে যাবে। ডার্ক ও আনডার্ক ফিচারের সাহায্যে প্রফেশনাল ইউজারেরা হাই-কোয়ালিটি গ্রাফিক্স উপভোগ করতে পারবেন। সেই সঙ্গেই আবার উইন্ডোজ ১১-তে এজ ব্রাউজারও বদলে দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গল ক্লিকেই মাল্টি টাস্কিং করতে পারবেন গ্রাহকেরা। পাশাপাশিই আবার অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের মতোই উইন্ডোজ ১১ চালিত যে কোনও কম্পিউটারের স্ক্রিনে নিজের পছন্দসই ওয়ালপেপার সেট করে রাখতে পারবেন। উইন্ডোজ ১১-এ দেওয়া মাইক্রোসফটের টিম ইন্টিগ্রেশনের সাহায্যে ইউজারেরা যে কোনও ডিভাইসের সঙ্গে ভার্চুয়ালি জুড়ে বাক্যালাপ করতে পারবেন। তার জন্য যে কোনও প্ল্যাটফর্ম থেকে উইন্ডোজ ১১-এর সাহায্যে টিমস ব্যবহার করতে হবে। এতে দেওয়া উইজেটস ফিচারগুলি পার্সোনালাইজডও করা যাবে। অফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার করা হয়েছে এতে। আবহাওয়া থেকে শুরু করে আরও একাধিক জরুরি উইজেটস দেখতে পাবেন গ্রাহকেরা। উইন্ডোজ ১১-এ জেস্চার ও স্টক ফিচার আরও উন্নত করা হয়েছে। আর তার ফলেই কিবোর্ডে হাত না দিয়েও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন কম্পিউটার। হ্যাপটিক সাপোর্ট রয়েছে, যার দ্বারা ইউজারেরা সরাসরি স্টাইলস থেকে কাজ করতে পারবেন। এছাড়াও, থাকছে ভয়েস টাইপিং। অর্থাৎ আপনার আওয়াজ শুনেই টাইপ করতে শুরু করে দেবে কম্পিউটার। শুধু তাই নয়। উইন্ডোজ ১১-এ সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজও থাকবে। ভাড়া নিয়ে অথবা সরাসরি কিনেই সিনেমা বা সিরিজ দেখতে পারবেন গ্রাহকেরা। মাইক্রোসফটের তরফে এদিন বলা হয় যে, গেমস খেলতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজ ১১-এই গেমারেরা সেরার সেরা গেমিং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন। কোম্পানির তরফে আরও দাবি করা হয়েছে যে, এই উইন্ডোজ ১১-ই হচ্ছে গেমিংয়ের ভবিষ্যৎ। এতে Auto HDR ফিচার দেওয়া হয়েছে, যার সাহায্যে গেম খেলার সময় অটোমেটিক্যালি লাইট আপডেট হবে, যাতে ভিজ়িবিলিটি আরও পরিণত হয়। তার জন্য প্লেয়ার এবং গেম ডেভেলপারদের কিছুই করতে হবে না। উইন্ডোজ ১১-এ ডায়রেক্ট স্টোরেজ ফিচার থাকার ফলে গেম খুব দ্রুততার সঙ্গে লোড হবে। এছাড়াও, এতে Xbox অ্যাপের সাহায্যে গেম পাস সাবস্ক্রিপশনও দেওয়া হয়েছে।
- Windows 11-এর Windows লোগোতে নতুন ডিজাইন থাকছে। আগের লোগোর পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছে একটি বর্গাকার নীল রঙের লোগো। এ ছাড়াও লোগোর চারপাশে শার্প কর্নারের বদলে দেখা যাবে রাউন্ডেড কর্নার।
- স্টার্ট মেনুর সঙ্গেই অন্যান্য অ্যাপ আইকন এবার টাস্ক বারের মাঝে এসেছে। স্টার্ট মেনুর পাশেই থাকছে সার্চ মেনু। আগের মতো বড় সার্চ মেনু দেখা যাবে না।
- টাচ মোডে আরও ভাল কাজ করবে Windows 11.
- বিশেষত Windows 11-এ সরাসরি টিম ইন্টিগ্রেশন আসছে। ব্যবহারকারীরা যেকোনও কল, ভিডিও কল করতে পারবেন। ওপর ব্যবহারকারী অন্য ডিভাইস অর্থাৎ ম্যাকের ডিভাইস ব্যবহার করলেও তাতে সমস্যা হবে না।
- আইকনে পরিবর্তন ছাড়া ফাইল এক্সপ্লোরারে কোনও বড় পরিবর্তন দেখা যাবে না।
- এ ছাড়াও Windows 11-এ যোগ হয়েছে নতুন ওয়ালপেপার। স্টার্টআপ স্ক্রিনও অনেকটা Windows 10X-এর মতোই দেখতে। সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন স্টার্টআপ সাউন্ডও। ঢেলে সাজানো হয়েছে বিনোদন বিভাগও।
- Windows 11-এর হাত ধরে ফিরে আবার ফিরছে উইজেট। এবার থেকে উইজেট টাস্কবারে নতুন উইজেট অ্যাড করা যাবে। ডেভেলপাররা চাইলে নিজস্ব সফ্টওয়্যারের সঙ্গে নিজেদের উইজেটও তৈরি করতে পারবেন।
- থাকছে নতুন কি-বোর্ড। এই কিবোর্ডে আরও GIF ও emoji দেখা থাকবে।
- যুক্ত হয়েছে নতুন স্ন্যাপ কন্ট্রোল। যে কোনও অ্যাপে ম্যাক্সিমাইজ কী-র মাধ্যমে এই ফিচার ব্যবহার করা যাবে।
- Windows Store-এর ইউজার ইন্টারফেসেও পরিবর্তন এসেছে। আরও বড় ছবি ব্যবহার করে টেক্সটের ব্যবহার কমেছে।
- পাশাপাশিই আবার আগামী অপারেটিং সিস্টেমে Xbox ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ভাল হবে।