ধনকড়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতার পাশে যেমন ক্রমশ ভিড় বাড়ছে জাতীয় স্তরের পরিচিত মানুষদের, তেমনি তাঁর সঙ্গে ধনকড়ের দ্বন্দ্ব এবার জাতীয় রাজনীতির আঙ্গিনাতেও চলে আসছে। যার জেরে বিষয়টি শুধু আরই বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে গেল তাই নয়, ধনকর ইস্যুতে এবার বিজেপিকেও অস্বস্তির মুখে পড়তে হবে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে। সেই নয়ের দশকে চাঞ্চল্য ফেলেছিল জৈন কেলেঙ্কারি। এই জৈন কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গিয়েছিলেন তৎকালীন তাবড় রাজনীতিকরা। তা জনসমক্ষে এনেছিলেন সাংবাদিক বিনীত জৈন। এই ঘটনা যতটা আলোচিত হওয়া উচিত ছিল ততটা হয়নি। ব্যতিক্রম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৌচাকে ঢিল মেরেছেন মমতা! ফেসবুকে কার্যত সেটাই বলতে চেয়েছেন বিনীত। তাঁর কথায়,’হাওয়ালাকাণ্ডে উত্থাপনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেব। ১৯৯৩ সাল থেকে সন্ত্রাসবাদ,দুর্নীতি ও হাওয়ালার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও রাজনীতিক, দল বা সংগঠন দেশদ্রোহের এত বড় কাণ্ড নিয়ে সোচ্চার হননি।’ গতকাল বিকালে নবান্ন থেকে বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই তিনি ধনকরের বিরুদ্ধে হাওয়া কাণ্ডের চার্জশিট প্রসঙ্গ তোলেন। যদিও রাতে তা অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। কিন্তু এদিন গোটা বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ ধনকরকে ইস্তফা দিতে বলায়। এই বিনীতই নয়ের দশকে গোটা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন হাওয়ালা কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়ে। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী ধনকরের উদ্দেশ্যে সাফ বলেছিলেন, ‘১৯৯৬ সালের হাওয়ালা কেলেঙ্কারির চার্জশিটে ওঁর নাম আছে কি না, দেখুন। চার্জশিটে নাম ছিল।’ যদিও রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ভুল তথ্য দিচ্ছেন। উনি কোন চার্জশিটের কথা বলছেন? আমার নাম চার্জশিটে ছিল না। ওই মামলায় সকলেই নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে আদালত।’ কিন্তু এদিন ফেসবুকে নিজের পেজে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিনীত নারায়ণ। তিনি লিখেছেন, ‘নৈতিকতার খাতিরে পদত্যাগ করা উচিত জগদীপ ধনকড়ের। জৈনের হিসাব খাতায় তাঁর নামে ৫.২৫ লক্ষ টাকা উৎকোচ নেওয়ার কথা লেখা রয়েছে। এই কেলেঙ্কারিকে ফের জনসমক্ষে আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। এই ঘটনা যতটা আলোচিত হওয়া উচিত ছিল ততটা হয়নি। ব্যতিক্রম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ! ১৯৯৩ সাল থেকে সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি ও হাওয়ালার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও রাজনীতিক, দল বা সংগঠন দেশদ্রোহের এত বড় কাণ্ড নিয়ে সোচ্চার হননি। মমতা হলেন।’ মমতার গতকালের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল দাবি করেন, তাঁর নাম হাওয়ালাকাণ্ডের চার্জশিটে নেই। মামলায় সকলেই মুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এদিন বিনীত পাল্টা দাবি করে বলেছেন, ‘ধনকরের দাবি সর্বৈব মিথ্যা। জৈনের হিসাব খাতায় জগদীপ ধনকড়ের নামে ৫.২৫ লক্ষ টাকা ও কেরলের রাজ্যপালের পাশে ৭.৫ কোটি টাকা উত্কোচ নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। ধনকড়ের মতো অভিজ্ঞ আইনজীবীর মিথ্যা বলা উচিত নয়। সুপ্রিম কোর্টে মামলা এখনও বিচারাধীন। তাহলে তাঁরা কীভাবে অভিযোগ-মুক্ত হন! এর প্রমাণ দেখান। জৈন মামলায় তদন্ত এখনও হয়নি। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টও দেখুক। সে কারণে সন্ত্রাসবাদ, হাওয়ালা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ তো দূর বরং আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে দিয়েছে। নোটবন্দির সময় এগুলির উপরে নিয়ন্ত্রণের দাবি করা হয়েছিল, আজ পর্যন্ত তা হয়নি। মনে হয় বাংলার রাজ্যপালের পদে ধনখড়ের নিয়োগের আগে গোটা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়নি। লন্ডন ও দুবাইয়ে হাওয়ালার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও রাজনীতিকদের টাকাপয়সা জড়িয়ে রয়েছে এই মামলায়। এজন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিশনের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। তাঁর যুক্তি ছিল, কীভাবে সাংবিধানিক পদে দুর্নীতিগ্রস্তরা বসতে পারেন। মনে হচ্ছে, এ ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীকে উপযুক্ত আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়নি। সে কারণে ভুল করে নিয়োগ করেছেন তিনি। নৈতিক দায় নিয়ে ইস্তফা দেওয়া উচিত জগদীপ ধনকর ও আরিফ মহম্মদের।’