দেশ

বিক্রি হচ্ছে জাতীয় সড়ক থেকে বন্দর, রেল থেকে বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ থেকে কয়লা, দেশে সম্পদ বেঁচে কেন্দ্রের টার্গেট ৬ লক্ষ কোটি!

নয়াদিল্লি: সড়ক থেকে বন্দর। রেল থেকে বিমানবন্দর। বিদ্যুৎ থেকে কয়লা। দেশের সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার নতুন প্রজেক্ট। সোমবার ঢাকঢোল পিটিয়ে যার সূচনা করল নরেন্দ্র মোদি সরকার। প্রকল্পের নাম, ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন। আর লগ্নির লক্ষ্যমাত্রা, ৬ লক্ষ কোটি টাকা। আর এই ‘পাইপলাইনে’ ঢুকে পড়ল বাংলার হেরিটেজ টয় ট্রেন, হাওড়া ডিভিশন, বন্দর, এমনকী সল্টলেক স্টেডিয়ামের সাই কমপ্লেক্সও। এর আগে বিক্রির জন্য মোদি সরকার তালিকাভুক্ত করেছে ব্যাঙ্ক, বিমা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ভারত পেট্রলিয়ামের মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে। এবার তার সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে পরিকাঠামো সেক্টরের বেসরকারিকরণ। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারি সংস্থাকে মোটেই বিক্রি করা হচ্ছে না। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থা যৌথ উদ্যোগে লগ্নি করবে। পরিকাঠামো উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা-এই তিনটি ক্ষেত্রে বেশ কিছু সরকারি পরিকাঠামোকে তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্টেশন এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন। আছে বন্দর এবং হাইওয়ে। সড়ক পরিকাঠামোয় প্রথম পর্যায়ের আওতায় থাকবে ৫৮৬ কিমি। এই পর্যায়ে রয়েছে বাংলার কয়েকটি জাতীয় সড়ক। পূর্ব ভারতে মোট প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার কাজ চলতি বছরেই হতে চলেছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ২৮টি প্রকল্প নেওয়া হবে। আপাতত পালসিট, পানাগড়, ইসলামপুর, ডানকুনি, সোনাপুর ইত্যাদি এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া স্টেশনের আধুনিকীকরণ হবে। দেশের হিসেবে স্টেশনের সংখ্যা ৪০০। তার মধ্যে হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনও অন্তর্ভুক্ত। বেসরকারি দূরপাল্লার ট্রেন চালানোর জন্য মোট ১২টি  ক্লাস্টার করা হবে। এই ক্লাস্টারগুলির অন্যতম হাওড়া। মোট ১০৯ জোড়া বেসরকারি ট্রেন চালানো হবে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত  টয় ট্রেনকে বেসরকারি হাতে পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। এখানেই শেষ নয়, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রকের আওতায় থাকা একঝাঁক স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স পরিচালনা ও আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ ইস্টার্ন রিজিওনাল সেন্টার তার মধ্যে অন্যতম (সাই কমপ্লেক্স)। এই লিজ বাবদ টার্গেট রাখা হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা।  দেশের মোট ৩১টি বন্দর প্রকল্পও রয়েছে তালিকায়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা লগ্নি করা হবে। সেখানে রয়েছে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের একাংশ। ২৫টি বিমানবন্দরকে চিহ্নিত করা হয়েছে আধুনিকীকরণ ও বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে। যদিও প্রাথমিক তালিকায় বাংলার একটিও নেই। সরকারের আশা, এক্ষেত্রে ১৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। ১৬০টি কয়লাখনি প্রকল্প তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। বিএসএনএলের টেলিকম টাওয়ারের বেসরকারিকরণ হবে। এই তালিকায় অবশ্য বাংলা আছে। ভারতনেট বিভাগকে লাইসেন্স সার্ভিস এরিয়া প্রকল্পে বিলগ্নিকরণ করা হবে। যদিও সামগ্রিক বিক্রির পরিবর্তে ২৫ বছরের লিজের কথা ভাবা হয়েছে। সড়ক থেকে ট্রেন, পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের কথাও বলা হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরেই এই ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইনের প্রাথমিক প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার।