বেহালা পর্ণশ্রীর সেনপল্লিতে মা ও ছেলের জোড়া খুনের ঘটনায় ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে রহস্যের জাল ৷ যে জাল কাটতে গিয়ে একের পর এক তথ্য উঠে আসছে পুলিশের হাতে ৷ মৃত মহিলার স্বামীকে গতকালই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল পুলিশ ৷ এবার তাঁর বয়ান একাধিক অসঙ্গতি উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ৷ জানা গিয়েছে, খুনের যে আনুমানিক সময় তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় প্রায় দু’ঘণ্টা মৃত মহিলা সুস্মিতা মণ্ডলের স্বামীর মোবাইল ফোন সুইচ অফ ছিল ৷ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে দুপুর দু’টো থেকে তিনটের মধ্যে সুস্মিতা মণ্ডল এবং তাঁর ছেলে তমোজিৎ মণ্ডলকে খুন করা হয়েছে ৷ আর ঠিক সেই সময়ে, অর্থাৎ দুপুর দু’টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সুস্মিতা মণ্ডলের স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল ৷ এই জোড়া খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্তভার হাতে নিয়েছে ৷ যেখানে এবার সন্দেহের তালিকায় সবার আগে রয়েছেন সুস্মিতা মণ্ডলের স্বামী তপন মণ্ডল ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, তপন মণ্ডল তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি যখন বাড়ি ফেরেন তখন ঘরের দরজা খোলা ছিল ৷ ঘরের ভিতরে গিয়ে তিনি তাঁর স্ত্রী এবং ছেলের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পেয়েছিলেন৷ কিন্তু, অন্যদিকে তমোজিৎ মণ্ডলের গৃহশিক্ষিকা বিকেল পাঁচটার সময় ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন ৷ তাঁকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ৷ যেখানে পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, ওই সময় ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল ৷ তিনি দীর্ঘক্ষণ বেল বাজান এমনকি ডাকাডাকি করেন ৷ কিন্তু, ভিতর থেকে কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি নাকি ফিরে যান ৷ কিন্তু, তপন মণ্ডলের বয়ান অন্য কথা বলছে ৷ তিনি জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে তিনি ফ্ল্যাটের দরজা খোলা পেয়েছিলেন ৷ ফলে গৃহশিক্ষিকা এবং তপনবাবুর বয়ানের মধ্যে এই ফারাক পুলিশের সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ কে সত্যি কথা বলছেন ? তা জানতে পুলিশ প্রতিবেশীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ৷ যেহেতু তপন মণ্ডলের ফোন বন্ধ ছিল ৷ তাই তাঁর ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব নয় ৷ ফলে পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী তপন মণ্ডলের কর্মস্থলে গিয়েও পুলিশ তদন্ত করবে বলে জানা গিয়েছে ৷ সেই সময় তিনি অফিসে ছিলেন কি না, বা না থাকলে কোথায় গিয়েছিলেন, এমন একাধিক প্রশ্ন তপন মণ্ডলের সহকর্মীদের পুলিশ করতে পারে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের সময় তমোজিৎ স্কুলের অনলাইন ক্লাস করছিল ৷ তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তমোজিৎ পুরো ক্লাস করেনি ৷ তার স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তমোজিৎ ক্লাস শেষ হওয়ার আগেই অফলাইন হয়ে গিয়েছিল ৷ ঠিক কোন সময়ে তমোজিৎ অফলাইন হয়, তাও জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা ৷ পাশাপাশি, তমোজিৎ যে ফোন থেকে অনলাইন ক্লাস করছিল, সেই ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে না ৷ ফলে তদন্তকারীদের অনুমান, ওই ফোন থেকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলেও পাওয়া যেতে পারে ৷ তাই খুনি সেই ফোনটি নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে ৷ ওই মোবাইলে ব্যবহার হওয়া নম্বরটি পুলিশ ট্র্য়াকিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে ৷ এছাড়াও এই খুনের ঘটনার আরও সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, খুনের পর আততায়ী ঐ বাড়িতেই বাথরুমে স্নান করে।তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য স্নান করে আততায়ী। জলের পাইপের থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেনসিক দল। মৃতার স্বামীর আংটিতে রক্তের দাগ মিলেছে বলে সূত্রের খবর। জানা গেছে, পুলিশকে মৃতার স্বামী জানিয়েছিলেন যে, তিনি মৃতদেহ স্পর্শ করেননি। তারপরও তাঁর আংটিতে রক্তের দাগ কীভাবে এল তা পুলিশকে ভাবাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। প্রথমে খুন করা হয় মহিলাকে, পরে খুন করা হয় ছেলেকে, এমনই অনুমান তদন্তকারীদের।