বিজয়া দশমী তিথি মানেই গঙ্গার ঘাটগুলিতে একের পর এক প্রতিমা বিসর্জন । আজ থেকে পরপর চারদিন বিসর্জন দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই মতোই আজ, শুক্রবার কলকাতার বিভিন্ন বাড়ির প্রতিমা ও ছোট বারোয়ারি পুজোগুলির প্রতিমা বিসর্জন হবে। তার পরে শুরু হবে বড় পুজোগুলির ভাসান। এই জন্য ১৭টি ঘাটে প্রস্তুতি ও সতর্কতা সারা হয়েছে। কলকাতা কর্পোরেশন এবং কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে বেশ কিছু ঘাট নির্ধারিত করা হয়েছে। সেই নির্ধারিত ঘাটগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। যাতে কোনওভাবে আইন লঙ্ঘিত না হয়, কিংবা কোনও বিপদ না ঘটে, লক্ষ রাখা হয়েছে সেদিকেও। বাবুঘাটে বিসর্জনের জন্য মূর্তি বহনের ক্রেন এবং বেশ কয়েক জন শ্রমিককে নিযুক্ত করে রেখেছে কর্পোরেশন। ঘাট যাতে কোনওভাবে নোংরা না হয়, তার জন্য হোস পাইপের মাধ্যমে জল দিয়ে পরিষ্কার করারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্পোরেশনের আধিকারিকদের কথা অনুযায়ী, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ মতো গঙ্গায় যাতে কোনভাবে দূষণ না ছড়ায়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। তার জন্য নদীতে মূর্তি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে তুলে ফেলার জন্য ক্রেনের ব্যবস্থা করেছে। তাঁর আরও বক্তব্য, যেহেতু প্রতিমা নির্মাণে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রং ব্যবহার হয় ,সে জন্য যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি জল থেকে প্রতিমা তোলার ব্যবস্থা তাঁরা করে রেখেছেন। প্রতিমা ক্রেন দিয়ে জল থেকে তোলার পাশাপাশি কর্পোরেশনের অনেক লরি রাখা হয়েছে । ওই লরিতে বিসর্জন দেওয়া প্রতিমা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কোভিড বিধি মেনে গঙ্গা ঘাটে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজোর আয়োজকরা কয়েকজন ছাড়া বেশি লোক যাতে ঘাটে না ঢুকতে পারেন , তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করে রেখেছে কর্পোরেশন। শুক্রবার দুপুর বারোটার পর থেকেই গঙ্গায় বিসর্জন শুরু হওয়ার কথা। প্রথমদিন প্রায় দেড় হাজারের বেশি প্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জন হওয়ার কথা। নিরাপত্তার দায়িত্বে ৩ হাজার পুলিশ কর্মী ও নিরঞ্জনে সাহায্য করতে হাজির থাকছেন দু’হাজারের বেশি পুরকর্মী ও অফিসার। গঙ্গাবক্ষে স্পিড বোটে চলবে নজরদারি। থাকবে রিভার ট্রাফিক গার্ড ও বিপর্যয় মোকাবিলা টিম। বিসর্জন দিতে আসা ব্যক্তিদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ২টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে চলবে পুলিশের নজরদারি। ডিজে অথবা মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকজনকে ঘাট চত্বরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। প্রতিমার জন্য গাড়ির সংখ্যাও নির্দিষ্ট। অন্যদিকে, গঙ্গার ঘাটের সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন হবে কলকাতার ৩৪টি পুকুরেও। তাই প্রত্যেকটি পুকুরেও থাকছে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা। একই সঙ্গে কোভিড বিধি অগ্রাহ্য করে যদি কোনও পুজো কমিটি শোভাযাত্রা বের করে, তবে পুলিশ সেই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। ঘাটের পাশাপাশি শহরের ৩৪টি পুকুরেও যাতে বিসর্জন দেওয়া যায়, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের দেওয়া অনুমতিপত্র অনুযায়ী, নির্ধারিত দিন, সময় ও নির্দিষ্ট ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানো যাবে না। বিসর্জনের ঘাটে পুজো কমিটির সদস্যদের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। পুলিশের নির্দেশ মেনেই চলতে হবে তাঁদের। ঘাটের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। নিমতলা ঘাট, বাজে কদমতলা ঘাট, গোয়ালিয়র ঘাট ও বিচালি ঘাটের আশপাশে পুলিশের চারটি যন্ত্রচালিত নৌকা থাকছে। এই নৌকায় থাকা কর্মীরা প্রতিমার কাঠামো টেনে নেবেন, যাতে পরের প্রতিমা বিসর্জন দিতে সমস্যা না হয়। গঙ্গায় যদি বান আসে, তাহলে দুর্ঘটনা এড়াতে তা পুজো উদ্যোক্তাদের আগাম জানিয়ে দিতে হবে। দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরের লায়েলকা পুকুর, পাটুলির পাটুলি পুকুর, হরিদেবপুরের ইটখোলা পুকুর, সরশুনা ঝিল, মুকুন্দপুর পুকুরে বিসর্জন হবে।