এদিন কার্শিয়াঙের কর্মিসভাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেমক্কা ধমক শুনতে হল রাজ্যসভার সাংসদ শান্তা ছেত্রীকে। সে ধমক বেশ কড়াই ছিল। সরাসরিই দিদি বলে দিলেন, কাউন্সিলর ভোটে জেতার ক্ষমতা ছিল না। তিনি ছিলেন বলে সংসদের উচ্চকক্ষে পৌঁছতে পেরেছেন। এটা যেন তাঁর খেয়াল থাকে! এদিন প্রশাসনিক সভায় রাজ্যসভার সাংসদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই শান্তা অনীতদের সঙ্গে (থাপা) ঝগড়া করবে না। আবার বলছ ধর্ণা দেবে! কাউন্সিলর ভোটে হেরে গেছিলে। এমপি সিটে পাঠিয়েছি। আবার ধর্না কী? ঝগড়া করবে না আমি বলে দিলাম।’ সভামঞ্চেই, অনীত থাপার পক্ষে সুর তুলে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘অনীত আমাদের বন্ধু, ওঁদের সঙ্গে ঝগড়া নয়’। এরপরেই নিজের দলের সাংসদ শান্তা ছেত্রীকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘শান্তা, দলের একটা ডিসিপ্লিন রয়েছে। অনীতদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না। তুমি সুব্রতর সঙ্গে এ ব্য়াপারে একবার দেখা করবে। পাহাড়ের সকলে আমাদের বন্ধু।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে গেলেই জিটিএ-এর ভোট হবে। অনেকের মতে সেদিকে তাকিয়েই এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে অনীত থাপার উপস্থিতিতে শান্তাকে ভহর্ত্সনা করে তাঁদের দিকে বন্ধুবার্তা দিতে চাইলেন মমতা। বিজয়া সম্মিলনীর মতো এদিনও প্রশাসনিক বৈঠকে বিনয় তামাং, বিমল গুরুংদের দেখা যায়নি। তবে রোশন গিরি ছিলেন কার্শিয়াঙে। পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কার্শিয়াংয়ের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে পাহাড়ে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উন্নয়নের পাশাপাশি স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর
এই কাজে পাহাড়ের ছোট-বড় সব দলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানালেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমাকে সুযোগ দিন। পাহাড়ের স্থায়ী সমাধান করে দেব।” পাহাড়ের স্থায়ী সমাধান নিয়ে মমতা বলেন, “বাইরে থেকে এসে রাজনীতি করে চলে যাচ্ছে। দার্জিলিংকে ভেঙে দিচ্ছে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ হবে। পাহাড়ের পার্মানেন্ট সলিউশন হবে পাহাড়ের মানুষকে নিয়েই।” উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে কেন্দ্রীয় সরকার পাহাড় নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিল। তাতে পাহাড়ের স্থানীয় নেতা বিমল গুরুং, রোশন গিরিরা ব্রাত্য ছিলেন। এদিন তাঁদের নিয়েই সমাধানের পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যপাধ্যায়ের এদিন প্রশ্ন তোলেন, “কাশ্মীরে কেন রক্ত ঝরবে? পাহাড়ে কেন রক্ত ঝরবে? আমি শান্তির পক্ষে। কিন্তু সরকার থাকলেই সব করতে পারে না।” মমতার আরও অভিযোগ, “এখানে বহিরাগতরা গোলমাল পাকায়। ভিতরের কেউ এসব করে না।” এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, একদিন আগেই বিমল গুরুং স্থায়ী সমাধানের দাবি তুলেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, “ভোটার তালিকা সংশোধন হলেই জিটিএ নির্বাচন করা হবে। তার আগে নিজেরা কথা বল। সমস্যা মেটাও। ঝগড়া কর না। একসঙ্গে কাজ কর।” ২০০১ সাল থেকে পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোট হয়নি। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানে দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে। ত্রিস্তরীয় করা হবে।” এদিনের বৈঠকে রোশন গিরি এবং অনীত থাপা পাহাড়ের জন্য আলাদা স্কুল সার্ভিস কমিশনের দাবি করেছেন। সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। শুধু তাই নয়, পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য সব দলের প্রতিনিধি, শিল্পগোষ্ঠীদের নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূলের অভিযোগ, সেই অশান্তিতে বারবার ইন্ধন জোগাচ্ছে বিজেপি। পাহাড়কে আলাদা রাজ্য করারও ‘জুজু’ দেখায় কেন্দ্র। আর এই প্রস্তাব দিয়ে পাহাড়ের স্থানীয় দলগুলিকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করে তাঁরা। এবার সেই সমস্ত প্ররোচনা, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ইতি টানতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী।