হলদিয়ায় শ্রমিক সংগঠনের সভা থেকে এক দিকে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে যেমন আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনই দলীয় জেলা নেতৃত্বকেও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়ালেই কড়া ব্যবস্থা নেবে দল। তৃণমূল করতে হলে ঠিকাদারের জামা ঘরে খুলে আসুন। না হলে ঠিকাদারি করুন। তৃণমূল করলে ঠিকাদার হওয়া যাবে না। এমনটাই বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া বার্তা দিলেন ঠিকাদারদের উদ্দেশ্যে। বুঝিয়ে দিলেন, তিনি খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে আছেন। শুভেন্দু গড় বলে পরিচিত হলদিয়াতে উপচে পড়ল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সমাবেশ। অভিষেক তা দেখে সভার শুরুতেই বললেন, এই সমাবেশ দলের শ্রেষ্ঠ ট্রেড ইউনিয়ন সমাবেশ। এদিন বলেন, আগের মাসে অতিরিক্ত সময় কাজ করে যিনি ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছেন, পরের মাসে একই কাজ করে তিনি পেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। এরপরেই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ১২ ঘন্টার কাজ করিয়ে ৮ ঘন্টার টাকা দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ৪ ঘন্টা টাকা দিতে হবে। তা না হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেসে মামলা করবেন বলেও হুঁশিয়ারি করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয়দের কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক। এদিন ঠিকাদারদের হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, যাঁরা শ্রমিকদের টাকা কেটে ওপরে পাঠাচ্ছেন, তাঁরা সাবধান হয়ে যান। কোনও দাদার ছত্রছায়ায় থেকে কিছু হবে না। নেত্রী একজনই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, কন্ট্রাক্টরি করে তৃণমূল করা যাবে না। দল করতে হলে আগে ঠিকাদারের পোশাক খুলে রাখতে হবে। এরপরেই ৩ মাস থেকে ১০০ দিন সময় চেয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হলদিয়ায় কোনও ঠিকাদার নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন মানে কেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হওয়া। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাযোগ রাখা নয়। হলদিয়া পুরসভায় ডেভলপমেন্ট ট্যাক্স নিয়েও সরব হন তিনি। বলেন, কোনও কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটিতে এই কর নেই। এরপরই প্রশ্ন করেন তাহলে এখানে কেন থাকবে? সমস্ত বেআইনি কাজের অডিট হবে বলেও কড়া হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক। শ্রমিক সংগঠন ও নেতাদের রাস্তায় নামার বার্তা দেন তিনি। সিওডি গঠনে ২০ শতাংশ শ্রমিক লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। থাকবে না কোনও ঠিকাদার। চাটার্ড অব ভিশনে এই প্রস্তাবই থাকবে বলে দাবি করেন তিনি। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের স্বার্থে বলেন, পিএফ- ইএসআই দিতে হবে। শ্রমিকদের ওপর কন্ট্রাকটররা ছড়ি ঘোরাতে পারবেন না। আর তা করলে পালানোর পথ পাওয়া যাবে না। এদিন সভায় শ্রমিকদের মধ্যে একজন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান এক শ্রমিক। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে বাধা দিলেও, ওই শ্রমিকের কাছে চলে যান অভিষেক। সরাসরি তাঁর সমস্যার কথা শোনেন। আশ্বাস দেন সমাধানের। এদিনের সভা থেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’দের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন তৃণমূলের যুবরাজ। বলে, কে কী গোপন সভা করে, কে পদ্ম পতাকা তুলে পরের দিন তৃণমূলে ছাপ দেন, সেই সব তথ্য তাঁর মোবাইলে আচে। আছে তালিকাও। কিছু ‘অনুগামী’ সভাতেও এসেছেন দাবি করে তিনি বলেন, সভায় আসার পথে এই ধরণের ৪-৫ জনকে চিহ্নিত করেছেন তিনি।