কলকাতা

কলকাতা থেকে মামলা সরল দিল্লিতে, স্যাটের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়

রাজ্যের প্রাক্তন বাঙালি মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে টানাপোড়েন একসময় তুঙ্গে উঠেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কার্যত সর্বশক্তি দিয়ে যেমন আলাপনের পাশে দাঁড়িয়েছে, ঠিক তেমনি কেন্দ্র সরকারও সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে আলাপনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে শাস্তি দিতে। আর সেই কারনেই এবার কেন্দ্রের ছত্রছায়ায় থাকা সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টে তিনি যে মামলা দায়ের করেছেন এই বিষয়ে তার শুনানির সম্ভাবনা থাকছে আগামিকালই। গত ২৮ মে যশ বিধ্বস্ত বাংলা পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডা বিমানঘাঁটিতে তিনি একটি পর্যালোচনামূলক বৈঠকও করেন। সেই বৈঠকে কিছুক্ষনের জন্য এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তত্‍কালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেদিনের বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বৈঠক ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী আর সেটা প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি স্বাপেক্ষে। তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই সেই বৈঠক ছেড়ে চলে আসেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই ঘটনা নিয়েই বিজেপির তরফে অভিযোগ তোলা হয় আলাপন কার্যত প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছেন ও তাঁর সার্ভিস কোড লঙ্ঘণ করেছেন। সেই ঘটনাকে ঘিরেই কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ মন্ত্রক আলাপনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। সেই মন্ত্রকের তরফেই শো-কজ করা হয় আলাপনকে। গত ৩১ মে ছিল আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরির শেষ দিন। সেদিনই তাঁকে দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দিল্লি না গিয়ে সেদিনই অবসর নেন এই আমলা। রাজ্য সরকার তাঁর কর্মজীবনের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর কথা জানালেও, শেষপর্যন্ত আর বাড়তি সময় চাকরি না করারই সিদ্ধান্ত নেন আলাপন। এরপর জুন মাসে আরও একবার কেন্দ্রের রোষের মুখে পড়েন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়, এনিয়ে আলাপনের কোনও বক্তব্য থাকলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা জানাতে হবে। তাছাড়াও জানানো হয়েছে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে মেজর পেনাল্টি প্রসিডিং নয়, তা তাঁকে জানাতে হবে। এই ৩০ দিনের মধ্যে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সামনাসামনি গিয়েও জানাতে পারেন, কেন তাঁকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া লিখিতভাবেও নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন আলাপন। কার্যত আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিং শুরু করে ওই মন্ত্রক। সেই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে স্যাটের কলকাতা বেঞ্চের দ্বারস্থ হন আলাপন। এর জেরে ওই মামলা কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরাতে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে আবেদন করে কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ মন্ত্রক। কিন্তু গত ২২ অক্টোবর ওই মামলা দিল্লিতে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয় সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চের তরফে। সেই নির্দেশকেই এবার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।