রাজ্যের সব পুজো মণ্ডপে সাধারণ দর্শকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি
কলকাতাঃ করোনা জেরে আজ ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে মামলার রায়ে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাংলায় সব পুজো মণ্ডপ দর্শকশূণ্য রাখতে হবে। ছোট মণ্ডপ হলে তার ৫ মিটারের মধ্যে এবং বড় মণ্ডপ হলে তার ১০ মিটারের মধ্যে কোনও দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবে না। হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মণ্ডপের শেষ প্রান্ত থেকে ফিতে মেপে ওই বলয় তৈরি করতে হবে। কোনও বড় মণ্ডপের বাইরে কোনও গেট তৈরি হলে সেটাকেই মণ্ডপের শেষ প্রান্ত বলে বিবেচনা করতে হবে। উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ সব পুজো মণ্ডপকে কনটেইনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল হাইকোর্টে।
হাইকোর্ট যা যা বলেছে দেখে নিন এক নজরে –
১) রাজ্যের প্রত্যেকটি পুজো মণ্ডপকে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে গণ্য করতে হবে।
২) বড় পুজোর ১০ মিটার ও ছোট পুজোর পাঁচ মিটারের মধ্যে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। মণ্ডপের শেষ অংশ থেকে এই দূরত্বের পরিমাপ করতে হবে। পুজো কমিটির সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ এই বিধি কার্যকর করবে।
৩) পুজোর কাজে কত জন যুক্ত থাকতে পারবেন তাও আদালত বলে দিয়েছে। বড় পুজোর ক্ষেত্রে ২৫ জন এবং ছোট পুজোর ক্ষেত্রে ১৫ জন মণ্ডপের ভিতর পুজোর কাজ করতে পারবেন।
৪) কোনটা ছোট পুজো বা কোনটা বড় পুজো তা ঠিক করবে পুলিশ।
৫) আদালতের নির্দেশ লিফলেট আকারে প্রতিটি পুজো কমিটিকে পৌঁছে দিতে হবে পুলিশকে।
৬) গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকার পুজোর বিধি সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। সে ব্যাপারে আদালত এদিন বলেছে, অত্যন্ত সৎ উদ্দেশ্য। কিন্তু শুধু ইচ্ছে থাকলেই হবে না। তাকে প্রয়োগ করতে হবে।
৭) এদিন মামলার রায়ে আদালত বলে, ধর্মাচরণে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। কিন্তু মহামারীর সময়ে উৎসবে অনুমতি দেওয়া যায় না। তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
৮) স্কুল-কালেজ এখনও স্বাভাবিক ভাবে খোলেনি। বাচ্চারা মাঠে খেলতে যেতে পারছে না। মানুষ মারা যাচ্ছেন। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন ভিড় কমাতে। এইরকম গুরুতর পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পরবেন আর কোনও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না তা হয় না। তাই আদালত হস্তক্ষেপ করল।
৯) আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার ব্যাপারে পুলিশকে সক্রিয় হতে হবে।
১০) সারা রাজ্যে পুজোয় কেমন ভিড় হল না হল, আদালতের নির্দেশ কেমন কার্যকর হল তা লক্ষ্মী পুজোর চার দিনের মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে সেই রিপোর্ট দিতে হবে।
হাইকোর্টে এই মামলা করেছিলেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, “আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে আদালত। সরকার পুজো কমিটিগুলিকে টাকা বিলি করে উৎসবে উৎসাহ দিচ্ছিল। কোভিড নিয়ন্ত্রণে গা ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছে সরকার। আদালত মুখে না বললেও রায়ের নির্যাস হল এই, লাগাম না টানলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করত না। এখন প্রশাসন আদালতের রায় কী ভাবে কার্যকর করে সেটাই দেখার।”