চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমীতে কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণা অবতীর্ণ হন। নিষ্ঠার সঙ্গে দেবী অন্নপূর্ণার আরাধনা করলে সংসারে কখনও অভাব দেখা দেয় না।। ২০২৫ সালের অন্নপূর্ণা পুজোর তারিখ ৫ এপ্রিল ২০২৫। বাংলা তারিখ অনুযায়ী ২২ চৈত্র, ১৪৩১। এটি চৈত্র নবরাত্রির অষ্টম দিনে পড়ে এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে বাসন্তী পুজো নামেও পরিচিত।
পুরাণ মতে, দেবী অন্নপূর্ণা হলেন অন্নদাত্রী। দেবী পার্বতীর এক রূপ হলেন অন্নপূর্ণা। তাঁর কৃপায় ঘুচে যায় সমস্ত অভাব, সংসার হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ। ধরিত্রীতে যখন মহামারী এবং খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল, তখন ভক্তদের জন্য ভিক্ষার ঝুলি তুলে নিয়েছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। কারণ দেবাদিদেবের সঙ্গে দেবী অন্নপূর্ণার মতবিরোধ হলে দেবী কৈলাস ত্যাগ করেন। এর ফলে খাদ্যের অভাবে মহামারি ঘটে। ভক্তগণকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য দেবাদিদেব ভিক্ষার ঝুলি নিজের কাঁধে তুলে নেন। কিন্তু দেবীর মায়ায় ভিক্ষারও আকাল ঘটে, অর্থাৎ ভিক্ষা মেলে না। অবশেষে দেবাদিদেব শোনেন, কাশীতে এক নারী সকলকে অন্নদান করছেন। দেবীকে চিনতে মহাদেবের একটুও দেরি হয় না। অবশেষে মহাদেব দেবীর কাছে ভিক্ষা গ্রহণ করে ভক্তগণকে মহামারি এবং খাদ্যাভাব থেকে রক্ষা করেন। অন্নপূর্ণা পুজোর দিন, মহিলা এবং শিশুরা অন্নপূর্ণা স্তোত্র পাঠ করে। পুজোর স্থানে দেবী অন্নপূর্ণার বিশেষ মূর্তি স্থাপন করা হয়। ঐতিহ্য অনুসারে পুজো ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, পূর্বাহ্ন ৯ টা ৩৭ মিনিটের মধ্যে শ্রীশ্রীবাসন্তীদুর্গাদেবীর অষ্টমী বিহিত পুজো। রাত্রি ১১ টা ১৭ মিনিট গতে ১২ টা ৫ মিনিটের মধ্যে দেবীর অর্দ্ধরাত্রবিহিত পুজো। রাত্রি ১১ টা ৫৯ মিনিট গতে সন্ধিপূজারম্ভ। রাত্রি ১২ টা ২৩ মিনিট গতে বলিদান। আর তারপর নবমী তিথি পড়ে যাবে।
সময়সূচি:
- শুক্ল অষ্টমী তিথি শুরু: ৪ এপ্রিল, শুক্রবার মধ্যরাত ১ টা ৩৯ মিনিট
- শুক্ল অষ্টমী তিথি শেষ: ৫ এপ্রিল, শনিবার মধ্যরাত ১২ টা ২৩ মিনিট
অন্নপূর্ণা পুজোর দিন কী কী করলে পুণ্য লাভ হবে জেনে নিন –
অন্নপূর্ণা পুজোর দিন সকালে ঘর পরিষ্কার করা হয়। স্নানের পর প্রথমে গণেশের পুজো করা হয়। এর পরে, দেবী অন্নপূর্ণার ছবি, চিত্রকর্ম বা মূর্তি রাখুন পুজোর স্থানে। ছবির কাছে পাঁচ রকমের ফল রাখা হয়। পাঁচটি ভিন্ন ধরণের খাবার হয় এবং সেই সঙ্গে রাখা হয় পাঁচটি ভিন্ন ধরণের শস্যও। একটি জবা ফুলে লাল চন্দন লাগিয়ে তার মধ্যে একটি এলাচ দিয়ে দেবীরে পুজো করুন। দেবী মার সামনে মন্ত্র জপ এবং প্রার্থনা করুন। মরশুমি ফল ও সবজি ব্যবহার করে তাজা খাবার নৈবেদ্যর জন্য তৈরি করুন। পুজোর পর সেই প্রসাদ, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগ করে নিন। এই দিন বিশেষ করে শিশুদের জন্য অন্নদান অর্থাৎ খাদ্য দান করুন। এই দিনে পশুদের খাওয়ানোও সৌভাগ্য বয়ে আনে। এই দিন খাবার নষ্ট না করার চেষ্টা করুন। কাওকে বাজে কথা বলবেন না। আপনার ব্যবহারে যাতে কেউ কষ্ট না পায়। মিথ্যে কথা বলবেন না। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। সাদা পোশাকে পুজোয় বসা বাঞ্ছনীয়। এই দিন কোন ভিক্ষুককে পিতলের পাত্রে আতপ চাল দান করলে অত্যন্ত শুভ ফল মেলে। সম্ভব হল ঘর অন্ন রেঁধে গরিবদের খাওয়ান। যথেষ্ট সম্মান দিন।
দেবী অন্নপূর্ণার মন্ত্রঃ “হ্রীং নমো ভগবতি মাহেশ্বরি অন্নপূর্ণে স্বাহা” “অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে। জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি নমোঽস্তুতে।।”
বীজ মন্ত্র: “ॐ হ্রীং নমো ভগবতি মাহেশ্বরি অন্নপূর্ণে স্বাহা।”
প্রণাম মন্ত্র: “অন্নপূর্ণে নমস্তুভ্যং নমস্তে পরমম্বিকে। তচ্চারুচরণে ভক্তিং দেহি দীনদয়াময়ি॥ অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে। জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি নমোঽস্তুতে॥”
ধ্যান মন্ত্র: “রক্তাং বিচিত্রবসনাং নবচন্দ্রচূড়ামন্নপ্রদান-নিরতাং স্তনভার নম্রাম্। নৃত্যন্তমিন্দুশকলাভরণং বিলোক্য হৃষ্টাং ভজে ভগবতীং ভবদুঃখহন্ত্রীম।”
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র:” ॐ অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করা প্রানভল্লভে। জনা ভৈরাগ্যা সিদ্ধারত্যম ভিক্ষ্যম দেহি নমোহস্ততে।”