বৃহস্পতিবার বাংলা দিবস এবং রাজ্য সঙ্গীত নিয়ে প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল বিধানসভায়। ১লা বৈশাখ পালিত হবে বাংলা দিবস। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ১লা বৈশাখ ‘বাংলা দিবস’ পালনের প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১৬৭টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ৬২টি ভোট। নিজের বক্তব্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, ‘কে সমর্থন করল না করল কিছু যায় আসে না, আমাদের নির্দেশ থাকবে আমরা বাংলা দিবস পালন করব ১লা বৈশাখ, শুভ নববর্ষের দিন।’ এই দিন পালন নিয়ে বিতর্ক চলছে বহুদিন ধরেই। ইতিমধ্যে সঠিক দিন হিসেবে বিবেচ্য হবে কোন দিন, তার সামগ্রিক পর্যালোচনায় তৈরি হয়েছিল কমিটি। তাতে ১লা বৈশাখ দিনটিকে বাংলা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব উঠে আসে। তার পরেই বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব আনে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে প্রস্তাবক হিসেবে নাম ছিল আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুশীল সাহা, বিরবাহা হাঁসদা, সত্যজিৎ বর্মণ, কালীপদ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ দাস এবং কৃষ্ণ কল্যাণীর। একই সঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ কে রাজ্য সঙ্গীত করার উল্লেখ। আলোচনায় অংশ নেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি ১লা বৈশাখকে বাংলা দিবস হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয় কোনওভাবেই। চলতি বছরে ২০ জুনকে পশিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পালন করে রাজভবন। বিজেপিও রাজ্য জুড়ে এই দিনটি পালন করেছে। কিন্তু প্রথম থেকেই এই বিষয়ে আপত্তি তোলে রাজ্যের শাসক দল। মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ওই দিন দুই বঙ্গের মানুষের মানুষের কাছে দেশ ভাগের জ্বালা যন্ত্রণার মতো স্মৃতি জড়িত। আলোচনায় অংশ নিয়ে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী ১৬ অক্টোবর বাংলা দিবস পালনের দাবি তুলেছিলেন। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাফ জানান, এই প্রস্তাবে সই করবেন না রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস অস্বীকার করা যায় না। ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার ভোটাভুটিতে বাংলা ভাগের বিষয়টি স্থির হয়েছিল। শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন করেন, এই দিন পালনে আপত্তির জায়গা কোথায়? নিজের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপত্তি উঠছে কারণ, এর আগে কখনও ২০ জুন বাংলা দিবস পালন করা হয়নি, কেউ কখনও শুনিনি এই দিন বাংলা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে।’ তিনি আজ ফের বলেন, ‘তখনই আপত্তি তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।’ সবকিছু চাপিয়ে দিলেই সহ্য করা হবে না বলেও সুর চড়িয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৯৯ শতাংশ বিশিষ্ট মানুষ ১লা বৈশাখ বাংলা দিবসের পক্ষে মত দিয়েছেন, তাই ওই দিনটিতেই পালন করা হোক। তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা যদি বিধানসভা থেকে সরকার থেকে না করি, ভুল দিন থেকে যাবে। ভুল দিন থেকে গেলে পরবর্তী প্রজন্ম ভুল দিনের সাক্ষী হয়ে থাকবে।’শুভেন্দু অধিকারীর রাজ্যপালকে সই না করতে দেওয়ার উত্তরও দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘রাজ্যপাল সই না করলে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা এই দিন পালন করব। আমি দেখব কার শক্তি বেশি। জনগণের শক্তি বেশি, নাকি রাজ্যপালের শক্তি বেশি।’ সঙ্গেই তিনি বলেন বিরোধী পক্ষ রাজ্যপালের প্রসঙ্গ না তুলে আনলে এই কথা তিনি বলতেন না। বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় যাঁদের কোনও ভূমিকাই ছিল না, তাঁরা আজ স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলছে, দুঃখজনক, লজ্জাজনক।’ বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টে নাগাদ বিধানসভা থেকে মিছিল করে রাজভবনের উদ্দেশে যাবেন দলীয় বিধায়কেরা।