উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারীর পরিচয় দিতে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ‘মুসলিম কন্যা’ মন্তব্য নিয়ে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এবার সে নিয়ে বিবৃতি দিল বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশনও। সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়ার তরফে প্রকাশিত সে বিবৃতির ছত্রে ছত্রে নিন্দা ও সমালোচনা উপচে পড়েছে। তাঁরা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, এ রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিকে মেধার জোরে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া মেয়েটির পরিচয় ‘মুসলিম কন্যা’ বলে। উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের বৈঠকে কান্দির ছাত্রী রুমানা সুলতানার কথা বলতে গিয়ে, তাঁর নাম উল্লেখ না করে, ওই পরীক্ষার্থীকে কয়েকবার ‘মুসলিম কন্যা’ বলে সম্বোধন করেছেন সভানেত্রী মহুয়া দাস। বলেছেন, এটা উচ্চমাধ্যমিকের ইতিহাসে রেকর্ড। তাঁর তরফে যুক্তি, যেহেতু এবছর মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়নি, তাই প্রথম হিসেবে তিনি কারও নাম বলতে পারেন না, সে কারণে নাম উল্লেখ না করেই তিনি জানাতে চেয়েছেন, আগে কোনও মুসলিম মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়নি, এটা রীতিমতো ইতিহাস। তবে এই যুক্তিতে একেবারেই খুশি নন সাধারণ মানুষের বড় অংশ। তাঁদের যুক্তি, মেধার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয় সামনে আসবে কেন! এর পরেই আজ বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি দিয়ে লিখেছে, ‘গতকাল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রেস কনফারেন্সে যেভাবে নিজে নিজের সাম্প্রদায়িক, ন্যক্কারজনক মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক। যাঁর অনুপ্রেরণায় তিনি এমন মন্তব্য করতে পারেন, তিনি যদি ওই অভদ্রমহিলাকে এখনি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে না দেন, ধরে নিতে হবে, তাঁর ইচ্ছেতেই এমন মন্তব্য করেছেন মিস দাস। তাঁকেও সমান দায়িত্ব নিতে হবে।’ বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, গতকালের ঘটনাটি আকস্মিক নয়। এর আগেও মাদ্রাসা বোর্ডের ছাত্রদের স্কুল বোর্ডের ছাত্রদের সঙ্গে সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। তাদের আলাদা করা হয়েছিল। এভাবে বারবার ধর্মীয় বিভাজনেরই পরিচয় দিয়েছে রাজ্য সরকার, দাবি অ্যাসোসিয়েশনের। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘এক সম্মাননীয় ছাত্রীকে তাঁর প্রাপ্য, উপযুক্ত সম্মান না দিয়ে যেভাবে তাঁর ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে তাচ্ছিল্য করা হল, তাঁকে হেয় করা হল, তাঁকে অসম্মান করা হল, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করছি> যিনি প্রতিবছর গর্বের সঙ্গে মেরিটলিস্ট উচ্চারণ করেন, তিনি কেন এবারের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকের নামটা পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন না, তাঁকে একটি সম্প্রদায়ের ‘লেডি, গার্ল’ এসব বলে গেলেন! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি, তাঁকে এখনই ওই পদ থেকে অপসারণ করুন।’