কলকাতা

বাংলাদেশি সাংসদ খুনে ধৃত কসাইয়ের ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত

বাংলাদেশের সাংসদ আনওয়ারুল আজিম আনোয়ারের খুনে ধৃত কসাই জিহাদ হাওলাদারকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিল বারাসত আদালতে । এ দিন মুখ ঢাকা অবস্থায় সিআইডি’র গোয়েন্দারা ধৃতকে পেশ করেন বারাসত আদালতে । তবে, খুনের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও কথাই বলেননি ধৃত যুবক । ওপার বাংলার সাংসদ খুনের রহস্য উদঘাটন করতে এ দিন ধৃত জিহাদ হাওলাদারকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানায় সিআইডি । সিআইডি’র তদন্তকারীরা মনে করছেন, ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলে অনেক মিসিং তথ্য মিলতে পারে । তাতে তদন্তের অগ্রগতি হতে পারে বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের । সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে,বছর ২৪-এর ওই যুবকের বাড়ি বাংলাদেশে । তিনি অবৈধভাবে এ দেশে প্রবেশ করে বসবাস করছিলেন । পরে তিনি মুম্বইয়ে চলে যান । পেশায় জিহাদ একজন কসাই । গত ২ মাস আগে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসেন খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান । সেই মতো খুনের দিন নিউটাউনের ফ্ল্যাটে কসাই জিহাদ বাংলাদেশের সাংসদের নিথর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে খুনিদের সাহায্য করেন বলে তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে সিআইডি । তাই তিনিও এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারী বলে দাবি করেছেন সিআইডি’র গোয়েন্দারা । খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার মুম্বই থেকে এই কসাইকে গ্রেফতার করে ট্রানজিট রিমান্ডে এ রাজ্যে নিয়ে আসে সিআইডি’র বিশেষ তদন্তকারী দল । এরপর ভবানী ভবনে রাতভর ধৃত বাংলাদেশি নাগরিক জিহাদ হাওলাদারকে জেরা করা হয় । সিআইডি’র দাবি, জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন যে, ঘটনার দিন তিনি-সহ চারজন বাংলাদেশি নাগরিক নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বি-ইউ ব্লকের চার তলার ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন । সেখানে আগে থেকেই খুনের সবকিছু পরিকল্পনা তৈরি ছিল । সাংসদ আনওয়ারুল আজিম আনোয়ার সেখানে পৌঁছতেই তাঁকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করার পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় । খুনের পর তাঁর নিথর দেহ ফ্ল্যাটেই টুকরো টুকরো করে কেটে তা সরিয়ে দেওয়া হয় অন‍্যত্র । এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ট্রলি এবং প্লাস্টিকের ব‍্যাগও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা ।

বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজিম খুনের ঘটনায় দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি ৷ এই দু’জনের মধ্যে একজন ক্যাব চালক ও দ্বিতীয়জনকে আটক করা হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৷ ভবানী ভবন সূত্রে এই খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ পাশাপাশি, ঘটনায় মহিলাযোগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা ৷ এছাড়াও তদন্তকারীরা ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানতে পেরেছেন এক মহিলা-সহ মোট তিনজন একটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ফ্ল্যাটের বাইরে বেরিয়ে যেতে । এই বিষয় তদন্তকারীদের দাবি যে, ওই বাংলাদেশের সাংসদের দেহ লোপাট করার জন্যই ওই ট্রলি ব্যাগটি ব্যবহার করা হয়েছিল । এছাড়াও ওই মহিলা কোনওভাবে সাংসদের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ৷ বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজিম খুনের বিষয়টি বুধবার সকালে সামনে আসে ৷ এর পরই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে ৷ ইতিমধ্যেই সিআইডি-র তরফ থেকে একটি এসআইটি অর্থাৎ স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে ৷ যার মাথায় আছেন আই-জি (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী । ভবানী ভবন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, নিউটাউন সংলগ্ন যে ফ্ল্যাটে ওই এমপি ছিলেন, সেই ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি গ্লাভসের প্যাকেট । পাশাপাশি ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল রক্তের দাগ । এছাড়াও ওই সাংসদের মোবাইল ফোন ভিনরাজ্যে নিয়ে গিয়ে তদন্তকারীদের ধন্দে ফেলার চেষ্টাও করেছে আততায়ীরা ।পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে বারবার কথা বলছেন এই রাজ্যের তদন্তকারীরা ।