কলকাতাঃ তৃতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোভিড পরিস্থিতিতে সামাল দিয়ে রাজ্যের উন্নয়নই এখন তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই লড়াই তাঁর একার নয়, সঙ্গী আরও ৪৩ জন। সোমবার তাঁর মন্ত্রিসভার সেই ৪৩ জন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা হল। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেল দেখা গেল এবারের মন্ত্রিসভায়। নারী ক্ষমতায়নেও নজির গড়ল এবারের মন্ত্রিসভা। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসাবে ফের প্রত্যাবর্তন করছেন অমিত মিত্র। শিল্প, বাণিজ্য তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষদীয় মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পাচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাতে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থাকছে। অরূপ বিশ্বাস পাচ্ছেন বিদ্যুত্। ফিরহাদ পাচ্ছেন পরিবহণ। তবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত থেকে বার হয়ে যাচ্ছে খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। তিনি পাচ্ছেন বন দফতর। পরিবর্তে খাদ্য ও সরবরাহ দফতর পাচ্ছেন রথীন ঘোষ। এদিন রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বন্টনের যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁর হাতে আগে যে দফতরগুলি ছিল সেগুলিকে ধরে রেখেই বাকি দফতর মন্ত্রীদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকছে স্বরাষ্ট্র ও পাহাড়, কর্মীবর্গ ও প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং তথ্যসংস্কৃতি। তবে এবারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকেও মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন। অন্য কোনও মন্ত্রীর হাতে তুলে দেননি। অর্থাত্ উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই থাকছে। অমিত মিত্র রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্ব পাচ্ছেন পরিসংখ্যান ও যোজনা এবং পরিকল্পনা দফতরের। সুব্রত মুখোপাধ্যায় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা এবং শিল্প পুনর্গঠনের দায়িত্ব পাচ্ছেন। সাধন পাণ্ডে তাঁর ক্রেতা সুরক্ষা দফতর ধরে রেখে বাড়তি দায়িত্ব পাচ্ছেন স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বন দফতরের পাশাপাশি পাচ্ছেন অপ্রচলিত ও পুনর্যোগ্য শক্তির দফতর। বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা পাচ্ছেন সুন্দরবন উন্নয়ন বিষয়ক দফতর। বিদ্যুত্ দফতরের পাশাপাশি এবার রাজ্যের যুব ও ক্রীড়া দফতর থাকছে অরূপ বিশ্বাসের হাতে। মন্ত্রিসভার নতুন মুখ মানসরঞ্জন ভুঁইয়া পেয়েছেন জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর। সৌমেন মহাপাত্র পেয়েছেন সেচ ও জলপথ। মলয় ঘটকের হাতে থাকছে আইন ও বিচার দফতর। উজ্জ্বল বিশ্বাসের হাতেও কারা দফতর থেকে যাচ্ছে। অরূপ রায়ের হাতে থাকছে সমবায় দফতর। ফিরহাদ হাকিম পরিবহণের পাশাপাশি পাচ্ছেন আবাসন দফতর। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং বস্ত্রমন্ত্রী হচ্ছেন চন্দ্রনাথ সিনহা। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় হচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী। ব্রাত্য বসুর হাতে যাচ্ছে স্কুল ও উচ্চশিক্ষা দফতর। পুলক রায় পাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর। শশী পাঁজার হাতে থাকছে মহিলা, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর। গুলাম রব্বানির হাতে আসছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষার দফতর। বিপ্লব মিত্র পাচ্ছে কৃষি বিপণণ দফতর। জাভেদ খানের হাতে থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর। স্বপন দেবনাথের হাতে থাকছে প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতর। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী পাচ্ছেন গণশিক্ষা ও গ্রন্থাগার দফতর। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের মধ্যে বেচারাম মান্না পাচ্ছেন শ্রম দফতর, অখিল গিরি মত্স্য, সুজিত বসু দমকল, ইন্দ্রনীল সেন পর্যটন, সুব্রত সাহা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পুর ও নগর উন্নয়ন, রত্না দে নাগ পরিবেশ সন্ধ্যারানী টুডু পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ বুলু চিক বরাইক অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন দফতর এবং হুমায়ুন কবীর পাচ্ছেন কারিগরী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দফতর। এর বাইরে ইন্দ্রনীল সেনের হাতে থাকছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। একই চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে থাকছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। আবার সন্ধ্যারানী টুডুর হাতে থাকছে পরিষদীয় দফতরের প্রতিমন্ত্রীর অতিরিক্ত দায়িত্ব। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব যারা যারা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পরিবহণে দিলীপ মণ্ডল, বিদ্যুতে আখরুজ্জাম্মান, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নে শিউলি সাহা, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে শ্রীকান্ত মাহাতো, সেচ ও জলপথ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন বিষয়ক দফতরে সাবিনা ইয়াসমিন, বন দফতরে বীরবাহা হাঁসদা, খাদ্য ও গণবন্টনে জ্যোত্স্না মাণ্ডি, স্কুলশিক্ষায় পরেশচন্দ্র অধিকারী এবং যুব ও ক্রীড়া দফতরে মনোজ তিওয়ারি।
একনজরে দেখে নিন কে কোন দপ্তরের দায়িত্ব পেলেন –
🔴 মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র দপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, পুনর্বাসন, তথ্য সংস্কৃতি এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন।
🔴 সুব্রত মুখোপাধ্যায়: পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, পাবলিক এন্টারপ্রাইজ
🔴 পার্থ চট্টোপাধ্যায়: শিল্প ও বাণিজ্য, তথ্য প্রযুক্তি, সংসদ বিষয়ক
🔴 অমিত মিত্র: অর্থ, পরিকল্পনা এবং স্ট্যাটিসটিক
🔴 সাধন পাণ্ডে: ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী
🔴 জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক: বন দপ্তর, অপ্রচলিত এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
🔴 বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা: সুন্দরবন উন্নয়ন
🔴 মানসরঞ্জন ভুঁইঞা: জলসম্পদ উন্ননয়
🔴 সৌমেন মহাপাত্র: সেচ
🔴 মলয় ঘটক: আইন, বিচার
🔴 অরূপ বিশ্বাস: বিদ্যুৎ, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ
🔴 উজ্বল বিশ্বাস: কারা
🔴 অরূপ রায়: সমবায়
🔴 রথীন ঘোষ: খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ
🔴 ফিরহাদ হাকিম: পরিবহণ, আবাসন
🔴 চন্দ্রনাথ সিনহা: ক্ষুদ্র, কুটির এবং মাঝারি শিল্প
🔴 শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়: কৃষি
🔴 ব্রাত্য বসু: স্কুল শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা
🔴 পুলক রায়: জনস্বাস্থ্য কারিগরি
🔴 শশী পাঁজা: নারী ও শিশু কল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়ন
🔴 মহম্মদ গোলাম রব্বানি: সংখ্যালঘু উন্নয়ন এবং মাদ্রাসা শিক্ষা
🔴 বিপ্লব মিত্র: কৃষি বিপনন
🔴 জাভেদ খান: বিপর্যয় মোকাবিলা
🔴 স্বপন দেবনাথ: পশুপালন
🔴 সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী: জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার
স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা
🔴 বেচারাম মান্না: শ্রম
🔴 সুব্রত সাহা: খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন
🔴 হুমায়ন কবীর: প্রযুক্তি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন
🔴 অখিল গিরি: মৎস্য
🔴 চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য: পুর ও নগরোন্নয়ন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং পুনর্বাসন (প্রতিমন্ত্রী)
🔴 রত্না দে নাগ: পরিবেশ, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি
🔴 সন্ধ্যারাণী টুডু: পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন
🔴 বুলুচিক বারিক: অনগ্রসর উন্নয়ন এবং আদিবাসী উন্নয়ন
🔴 সুজিত বসু: দমকল
🔴 ইন্দ্রনীল সেন: পর্যটন এবং তথ্য সংস্কৃতি (প্রতিমন্ত্রী)