কলকাতা

রাজ্যপাল দুর্নীতিগ্রস্ত, হাওয়ালা জৈন কেসে চার্জশিটে নাম ছিল জগদীপ ধনকড়ের, বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্যপাল-শাসক দল সংঘাত তুঙ্গে রাজ্যে। ক্রমশই বাড়ছে উত্তাপ।  ফের রাজ্যপালকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফর নিয়ে মমতাকে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই বলেন, এত গাড়ি, নিরাপত্তার খরচের বহর! এই গোটা সফরটার তদন্ত হওয়া উচিত। কম্পট্রোলার অফ অডিটর জেনারেল তথা ক্যাগকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী কার্যত বিস্ফোরণ ঘটান। ধনকড় সম্পর্কে বলেন, ‘উনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত। আমি দুঃখিত, বলতে বাধ্য হচ্ছি একথা। ১৯৯৬-এর জৈন হাওয়ালা কেসে তাঁর নাম ছিল। চার্জশিটেও নাম ছিল। প্রথমে ম্যানেজ করে ক্লিয়ার করেছিল। পরে আবার জনস্বার্থ মামলা হয়। তা এখনও ক্লিয়ার হয়নি।’ মমতা বলেন, এমন একজন ভদ্রলোককে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যপাল করে পাঠিয়ে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, “এমন রাজ্যপাল আগে কখনও দেখিনি।” রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তীব্র তোপ দাগেন মমতা। প্রশ্ন তোলেন, ওনার মতো দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্যপালকে কেন্দ্র কেন সরাচ্ছে না?” একইসঙ্গে আরও একবার রাজ্যপাল অপসারণের প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, রাজ্যপাল অপসারণ চেয়ে তিনটি  চিঠি লিখেছি। কোনও কাজ হয়নি।”একইসঙ্গে রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফর প্রসঙ্গেও এদিন চাঁচাছোলা ভাষায় কড়া আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এইসময় কেন হঠাৎ উত্তরবঙ্গে গেলেন রাজ্যপাল? অশান্তি ছড়াতে জেনে বুঝেই গিয়েছেন।” শুধু তাই নয় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ আনেন মমতা। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে উস্কানি দিতেই গিয়েছেন রাজ্যপাল।”অভিজ্ঞ মহলের অনেকের মতে, বিভিন্ন সময়ে রাজ্যে রাজ্যপাল-রাজ্য সরকার সংঘাত হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের আক্রমণ ভারতে নজিরবিহীন। আগামী শুক্রবার তৃতীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের প্রথম বাজেট অধিবেশন শুরু। নিয়মানুযায়ী সেই অধিবেশন শুরু হবে রাজ্যপালের বক্তৃতা দিয়ে। কিন্তু তার আগে এই সংঘাতের জল কত দূর গড়ায় এখন সেটাই দেখার। এদেশে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে সব অভিযোগ রয়েছে হাওয়ালা কাণ্ড তার অন্যতম। জৈন ভাইয়ের হাত ধরে দেশের প্রথমসারির নেতাদের কাছে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পৌঁছে যেত বলে অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৬ সালে ওই কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসতে তাতে বিজেপির লালকৃষ্ণ আডবাণী, মদললাল খুরানা, কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা বলরাম জাখর, মাধবরাও সিন্ধিয়া, এনডি তেওয়ারি, জনতা পার্টির শরদ যাদব প্রমুখের নাম জড়ায়। লালকৃষ্ণ আদবানি অনন্য নজির গড়েন সাংসদ পদ ছেড়ে দিয়ে। তিনি ঘোষণা করেন, নিষ্কলঙ্ক ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত সংসদে ফিরবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, আমরা কী খাব, কোথায় যাব, অফিসাররা কোথায় যাবেন সব উনি (রাজ্যপাল ধনকড়) ঠিক করে দেবেন নাকি? উনি কী ভাবছেন? সবাইকে ডিক্টেড করবেন?’ এদিনও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে সরকারটা বিপুল জনাদেশ নিয়ে সবে মাত্র দুমাস হল এসেছে তাকে ডিস্টার্ব করা হচ্ছে? কেন্দ্রীয় টিম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় তফসিলি কমিশনের দল বাংলায় আসা, রাজ্যপালের ভূমিকা সবটা একসঙ্গে জুড়ে দেখাতে চান মুখ্যমন্ত্রী।