আজ কার্শিয়াংয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসকদের সঙ্গে এই বৈঠকেই তিনি শিল্পের বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানালেন। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, শুধুমাত্র দুধ নয়, আরও অনেক জিনিস বিক্রি করা যাবে প্রকল্পের মাধ্যমে। পাশাপাশি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অনেক কর্মসংস্থান হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শিলিগুড়িতে বন্ধ হয়ে যাওয়া হিমুল দুগ্ধ প্রকল্পের জায়গাতেই বাংলা ডেয়ারি করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলায় অনেক সুযোগ আছে। ডেয়ারি মানে শুধু দুধ নয়। মাংস, ডিমও বিক্রি করা হবে। তিনি আরও জানান, উত্তরবঙ্গের মাশরুম খুব বিখ্যাত। তাই সেগুলো প্রসেসিং করে বিক্রি করা যাবে। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানান, হিমুল বন্ধ হয়ে গেলেও কারও চাকরি যাচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দিয়েছি। পুরো হিমুল প্রকল্পের জায়গা নিয়েই নতুন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি এও বলেন, বলেন, বাংলা ডেয়ারির নাম দিয়ে দোকান খুলে দুধ বিক্রি করা যেতে পারে। সারা বাংলা জুড়ে দুধ, ডিম বিক্রি করা যাবে। মানুষ বাংলা ডেয়ারির দুধ কিনবে। তাতে অনেক দোকান হবে ও চাকরি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মমতা জানান স্থায়ী দোকান না খুলে ব্যবহার করা যেতে পারে ভ্যান। মমতার কথায়, এই সব জায়গায় অনেক ছেলেমেয়ে চাকরি হতে পারে। জানানো হয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং-এর সব ব্লকে খোলা হবে আউটলেট। যে সব শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চাকরির জন্য বাইরে চলে যাচ্ছেন, তাঁরা সেখানে কাজ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। পরে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও হবে আউটলেট। মমতা পরামর্শ দেন, হাসপাতাল ও বাজার এলাকায়
খুলতে হবে আউটলেট। তার জন্য ভর্তুকি দেবে সরকার। পাশাপাশি মুখ্যসচিব জানান, প্রত্যেক বছর ৩৯০ কোটি ডিম উৎপাদনের ঘাটতি রয়েছে রাজ্যে। সে সব ডিম বাইরে থেকে আনতে হয়। তাই আগামী তিন বছরের জন্য ডিম উৎপাদনের বিশেষ পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে বলে জানান তিনি। তাতেও বড় কাজের সুযোগ হবে বলে জানান মুখ্যসচিব। রাজ্যের নিজস্ব পোলট্রি ফার্মের সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছিলে তিনি। মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন, মাদার ডেয়ারির নাম নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু এটা রাজ্যের প্রোডাক্ট নয়। বাইরের প্রোডাক্ট। তাই বাংলা ডেয়ারি নামেই এবার থেকে এই প্রোডাক্ট পৌঁছবে রাজ্যবাসীর ঘরে ঘরে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলছিলেন, মনে রাখবেন মুরগির পোলট্রি, হাঁসের পোলট্রিও শিল্প। এগুলো করুন। বেশি করে মাছ তৈরি করুন। সরকার কিন্তু অনেক টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সেই পোলট্রির শিল্পতেই এবার জোর দিচ্ছে সরকার। এর পাশাপাশি এদিনের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, “আমরা কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করি। কিন্তু আমাদের সামনে থাকা জিনিসগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল নই। দার্জিলিংয়ে পাহাড়ের গায়ে যে গাছ থাকে, সেগুলির পাতা যদি রপ্তানি করা যায়, তা অত্যন্ত লাভজনক। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ।” এই পাতা রপ্তানির সুযোগকেই সোনার খনির সঙ্গে তুলনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরামর্শ দিয়েছেন, সঠিকভাবে কাজে লাগানোর। এর পাশাপাশি এদিন ঝরনার জল ব্যবহার করে পাহাড়ে ওয়াটার বটলিং প্ল্যান্ট তৈরির পরামর্শও দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার ফলে বাড়বে কাজের সুযোগ। আশ্বাস দেন সকলের পাশে থাকার। পাহাড়ি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা বিনিয়োগ করুন, আমরা সহযোগিতা করব।” এছাড়া পাহাড়ের পর্যটন শিল্পে জোর দেওয়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ের ছেলেমেয়েদের স্কিল ডেভেলপমেন্টে জোর দেওয়ার কথা বলেন। অর্থাৎ বলাই যায়, কর্মসংস্থান হোক কিংবা উন্নয়ন, পাহাড় নিয়ে বিশেষভাবে ভাবছে রাজ্য।