পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে আধার কার্ডের মতো গরুর পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু করল প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর। গরুর কানেও এবার ঝুলবে ১২ সংখ্যার নম্বর বিশিষ্ট হলুদ ট্যাগ। জেলায় প্রথম দফায় ৬৬ হাজারের কিছু বেশি গোরুকে ওই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তার আগে পরিচয়পত্র দেওয়া চলছে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, সোমবার থেকে রাজ্যের মোট সাড়ে সাত লক্ষ বকনা বাছুরকে টিকা দেওয়া হবে। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গরুর কানে ১২ সংখ্যার নম্বর বিশিষ্ট হলুদ ট্যাগ পরানো শুরু হয়েছে। ওই নম্বরের পাশাপাশি পরবর্তীকালে বারকোড লাগানো হবে। সেই বারকোড স্ক্যান করলেই ওই গোরুর কতগুলি কোন কোন সময়ে টিকাকরণ করা হয়েছে, তার সমস্ত তথ্য জানা যাবে। পাশাপাশি গোরুর মালিকের তথ্যও জানা যাবে। ১২ সংখ্যার নম্বর প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের পোর্টালে আপলোড করলেই সব তথ্য মিলবে। পশু চিকিৎসকরা জানান, ব্রুসেল্লোসিস ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। এই রোগে প্রসূতি গাভীর গর্ভপাত হয়ে যায়। অনেক সময় মৃত বা দুর্বল বাছুর জন্ম দেয়। দুধ উৎপাদন কমে যায়। এই রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হল ৪ থেকে ৮ মাসের সমস্ত বকনা বাছুরকে মাত্র একবার এই রোগের টিকাকরণ। এমনকী গবাদি পশু থেকে মানুষের মধ্যেও এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। মানব শরীরে ব্রুসেল্লোসিস জীবাণু সংক্রমণ হলে জ্বর, গাঁটে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। তাই গরুর এই টিকাকরণ খুব জরুরি।এবিষয়ে কেতুগ্রাম-১ ব্লকের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ সাহা বলেন, গোরুগুলি চিহ্নিতকরণের জন্য প্রাণিবন্ধুদের দিয়ে হলুদ ট্যাগ পরানো হচ্ছে। যেসব গোরুর ট্যাগ পরানো হচ্ছে, সেগুলির মালিকের পরিচয় সহ সমস্ত তথ্য পোর্টাল রেজিস্ট্রেশন করে রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য গত বছরই উত্তরপ্রদেশে ১ কোটি ৩৩ লাখ গরু-মোষের কানে হলুদ রঙের ট্যাগ লাগানো হয়ে গিয়েছে। ৬৬ লাখ গরু ও ৬৭ লাখ মোষের কানে লেগেছে চিপ সমেত ট্যাগ। একটি বিশেষ ধরনের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডি চিপ-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট গরুর বয়স, লোকেশন, প্রজাতি, টিকাকরণের সময়, দুধ দেওয়ার পরিমাণ, ওজনসহ সবই জানা যাবে। এছাড়া ওই নির্দিষ্ট গরুর মালিক এবং তাঁর ফোন নম্বরও থাকবে সেই চিপে। অনেক সময় দেখা যায়, দুধ দেওয়ার ক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে সেই গরুকে গোয়াল থেকে তাড়িয়ে দেয় মালিক। ফলে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে কখনো সেই গরু অনাহারে মারা যায়, কখনো বা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। উত্তরপ্রদেশের প্রশাসন জানিয়ে ছিল, প্রতিটি গরুর কানে ট্যাগ থাকলে এই ধরনের কাজ করার সাহস পাবে না পশুপালকরা।