দোল উৎসব ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হলেও এই উৎসবের সূচনা হয় পূর্বদিবস হোলিকা দহন বা নেড়াপোড়ার মাধ্যমে। আগামী ১৪ মার্চ শুক্রবার দোলযাত্রা উৎসব। দোলযাত্রা ঘিরে দিকে দিকে সাজো সাজো রব। মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই দিনটির জন্য। এদিকে, এই দোলের দিনই রয়েছে ২০২৫ সালের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ। স্বভাবতই চন্দ্রগ্রহণের সময়কাল আর দোলের তিথি জানার জন্য কৌতূহল অনেকেরই রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক, দোল পূর্ণিমা কখন থেকে পড়ছে, আর চন্দ্রগ্রহণের তিথি কী?
২০২৫ সালের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ –
ভারতীয় সময় অনুসারে রঙের উৎসবের দিন সকালে রয়েছে ২০২৫ সালের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ। তবে এই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ ভারত থেকে দেখা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে জ্যোতিষমতে এই চন্দ্রগ্রহণের কোনও প্রভাবই পড়বে না ভারতে। গ্রহণের সময় শুরু হবে ১৪ মার্চ, শুক্রবার সকাল ৯ টা ২৭ মিনিট থেকে। আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শেষ হবে সকাল ১০ টা ৩৯ মিনিটে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শেষ হবে বেলা ১১ টা ৫৬ মিনিটে। উল্লেখ্য, গ্রহণের ১২ ঘণ্টা আগে থেকে সুতককাল শুরু হয়। আর তা শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকে। তবে তবে এই গ্রহণে ভারতে সুতককালের মান্যতা নেই।
হোলিকা দহন শুভমুহূর্ত –
বৈদিক ক্যালেন্ডার অনুসারে, এবছর ম্যাড়াৎ পোড়া বা হোলিকা দহন হবে ১৩ মার্চ। হোলিকা দহনের শুভ সময় ১৩ মার্চ রাত ১১টা ২৬মিনিট থেকে মধ্যারাত ১২টা ৩০মিনিট পর্যন্ত হবে। এমন পরিস্থিতিতে হোলিকা দহনের মোট সময় হবে ১ ঘণ্টা ৪ মিনিট।
কথিত আছে, রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপু ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ও দাম্ভিক। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমান মনে করতেন। হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন শ্রী বিষ্ণুর পরম ভক্ত। কিন্তু তার পুত্রের ঈশ্বরভক্তি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না হিরণ্যকশিপু। তিনি নানাভাবে প্রহ্লাদকে কষ্ট দিতে থাকেন, কিন্তু প্রতিবারই বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ রক্ষা পান। অবশেষে, তিনি প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেন। এই ষড়যন্ত্রে সাহায্য করেন তার বোন হোলিকা। হোলিকার কাছে ছিল একটি জাদুকরী গায়ে দেওয়ার শাল, যা ভগবান ব্রহ্মার আশীর্বাদে তাকে আগুন থেকে রক্ষা করত। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে বসেন, ধারণা ছিল প্রহ্লাদ পুড়ে যাবে, কিন্তু হোলিকার ওই শালটির জন্য কিছুই হবে না। ঘটে যায় উল্টোটা। আগুনের মধ্যে প্রবেশ করা মাত্র শালটি হোলিকার শরীর থেকে উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদের গায়ে পড়ে। ফলে হোলিকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কিন্তু ভক্ত প্রহ্লাদ বিষ্ণুর কৃপায় সম্পূর্ণ অক্ষত থাকেন। এই ঘটনা থেকেই নাকি অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক হিসেবে হোলিকা দহনের প্রথা শুরু হয়। অন্য দিকে এও কথিত আছে, ম্যাড়াৎ অর্থা ভ্যাড়া রুপি রক্ত বীজ অসুর। যাকে বিষ্ণুর দোল পূর্ণিমার দিনের আগুনে পুড়িয়ে বধ করে ছিলেন। এই ঘটনার প্রতিকি উৎসব হলো “ম্যাড়াৎপোড়া” যা নাম বিভ্রাটে ম্যাড়া থেকে ন্যাড়া হয়েছে !
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে–
পূর্ণিমা তিথি আরম্ভ–
ইংরেজি– ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার।
বাংলা– ২৮ ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার।
সময়– সকাল ১০টা ৩৭ মিনিট।
পূর্ণিমা তিথি শেষ–
ইংরেজি– ১৪ মার্চ, শুক্রবার।
বাংলা– ২৯ ফাল্গুন, শুক্রবার।
সময়– দুপুর ১২টা ২৫ মিনিট।
মাহেন্দ্রযোগঃ রাত্রি ঘ ১০।২৮ গতে ১১।১৫ মধ্যে ও ৩।৫৪ গতে ৫।৫১মধ্যে।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে–
পূর্ণিমা তিথি আরম্ভ–
ইংরেজি– ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার।
বাংলা– ২৮ ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার।
সময়– সকাল ১০টা ২২ মিনিট ২৩ সেকেন্ড।
পূর্ণিমা তিথি শেষ–
ইংরেজি– ১৪ মার্চ, শুক্রবার।
বাংলা– ২৯ ফাল্গুন, শুক্রবার।
সময়– বেলা ১১টা ৩৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড।