পুজো

দেব শয়নী একাদশীর মাহাত্ম্য!

হিন্দু ধর্মে মোট ২৪টি একাদশীর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রতিটি একাদশীর বিশেষত্ব বর্তমান। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী হিন্দু ধর্মে বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ। এই একদাশী তিথিটি দেবশয়নী একাদশী নামে পরিচিত। দেবশয়নী একাদশী থেকে শুরু হয় চতুর্মাস। এদিন নিদ্রা যান বিষ্ণু। যার ফলে চার মাসের জন্য বিবাহ, গৃহপ্রবেশ, উপনয়ন, নামকরণ-সহ সমস্ত শুভ অনুষ্ঠান আয়োজন নিষিদ্ধ। আসুন জেনে নেই দেবশয়নী একাদশীর গুরুত্ব। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে দেব শয়নী একাদশী থেকেই চার মাসের জন্য নিদ্রাবিভূত হন নারায়ণ। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে পালিত হয় দেবশয়নী একাদশী। বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী এই দিনে বিষ্ণু চার মাসের জন্য ক্ষীর সাগরে যোগ নিদ্রায় যান। এই চার মাসকে একত্রে চর্তুমাস বলা হয়। চর্তুমাসে কোনও রকম শুভ কাজ করতে নেই। কার্তিক মাসে শুক্লা একাদশী তিথিতে জাগরিত হন বিষ্ণু। এই দিনটি পরিচিত দেব উত্থানী একাদশী। আসুন জেনে নিই দেবশয়নী একাদশীর গুরুত্ব, উপবাস পদ্ধতি।  দেবশয়নী একাদশী হরিশয়নী একাদশী নামেও পরিচিত। সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক ভগবান বিষ্ণু এই তারিখ থেকে চার মাসের জন্য যোগনিদ্রায় যান। শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে দেবশয়নী একাদশী সূর্য, চন্দ্র ও প্রকৃতির তেজস উপাদানকে হ্রাস করে, যার কারণে শুভ কর্মের শুভ ফল পাওয়া যায় না। তবে এই একাদশীর উপবাস করে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করলে সমস্ত ঝামেলা দূর হয় এবং জীবনে অর্থ ও শস্যের অভাব হয় না। এছাড়াও এই পবিত্র তিথিতে দান করলে সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৬ জুলাই রাত ৮টা ৩২ মিনিটে আষাঢ় শুক্ল একাদশী তিথি শুরু হচ্ছে। শেষ হবে ১৭ জুলাই রাত ৯টা ১ মিনিটে। উদয়া তিথি অনুযায়ী ১৭ জুলাই এই একাদশী ব্রত পালিত হবে। দেবশয়নী একাদশীতে বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর পুজো করার জন্য সকাল ৫টা ৩৪ মিনিট থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় অত্যন্ত শুভ।

এ বছর দেবশয়নী একাদশীতে অনুরাধা নক্ষত্র, সর্বার্থসিদ্ধি যোগ, অমৃতসিদ্ধি যোগ, শুভ যোগ ও শুক্ল যোগের প্রভাব থাকবে। যার ফলে এই একাদশীর তিথির মাহাত্ম্য বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে পবিত্র স্নান করুন তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি কোনও বডি সোপ বা বডি ওয়াশ ব্যবহার করবেন না কারণ একাদশীর দিনে অনুসরণ করার জন্য বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে৷ আপনার ঘর পরিষ্কার করুন এবং তারপরে একটি কাঠের তক্তার উপর ভগবান বিষ্ণু, ভগবান কৃষ্ণ বা লাড্ডু গোপাল জির একটি মূর্তি রাখুন এবং তারপরে দেশি ঘি দিয়ে একটি দিয়া জ্বালান। ভগবান বিষ্ণুকে হলুদ রঙের ফুল অর্পণ করুন এবং তুলসীপত্রও নিবেদন করুন এবং বিষ্ণু সহস্রনাম ও বৈদিক মন্ত্র পাঠ করুন। শুদ্ধ নিয়তে এই রোজা পালনের সংকল্প নিন। ভক্তদের পরের দিন দ্বাদশী তিথিতে উপবাস ভাঙতে হবে।

আষাঢ় শুক্ল একাদশী তিথি অর্থাৎ দেবশয়নী একাদশী থেকে ক্ষীর সাগরে নিদ্রায় যান নারায়ণ। এবার ১৭ জুলাই থেকে চতুর্মাস শুরু হবে। এই একাদশী তিথি আবার হরিশয়নী একাদশী, আষাঢ়ী একাদশী, পদ্মনাভা একাদশী নামেও পরিচিত। দেবশয়নী একাদশীতে হরির আরাধনা করলে ব্যক্তি নরক ও যমলোকের যাতনা থেকে মুক্তি পায়। বৈকুণ্ঠ লাভ করে জাতক। এর পর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে চতুর্মাস সমাপ্ত হবে। ১২ নভেম্বর দেবউঠনী একাদশীর দিনে নিদ্রাভঙ্ক হবে বিষ্ণুর। এর পর থেকেই সমস্ত শুভ কাজ শুরু হবে।