মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক উদ্যোগের সামনে তুচ্ছ ভোটের লড়াই। আর তাই রাজ্যে এই প্রকল্পের সবথেকে বড় সমালোচক দিলীপ ঘোষের পরিবারই করিয়ে ফেলল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। অবাক করা এই ঘটনা ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে রীতিমতো লাইন দিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করিয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছোট ভাই হীরক ঘোষ এবং খুড়তুতো ভাই সুকেশ ঘোষের পরিবার। দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের আক্রমণ। দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে বিজেপির ছোটবড় প্রায় সব নেতা প্রতিটি জনসভায় গলা চড়িয়ে প্রচার করেছেন- স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কোনও সুবিধা মিলবে না। মোদির ‘আয়ুষ্মান ভারত’-ই ভালো। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তিও বাড়িয়েছেন। কিন্তু মুখে যাই বলুন না কেন, বিজেপির নেতাদের পরিবারের লোকজন ছুটছেন সেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পিছনেই। কদিন আগেই ঝাড়গ্রাম জেলার বিজেপি সভাপতির পরিবার এই প্রকল্পে নাম লিখিয়েছে। এবার তো স্বয়ং রাজ্য সভাপতির পরিবারের সদস্যরাও সেই পথে হাঁটল। এই গ্রামেই থাকেন দিলীপবাবুর খুড়তুতো ভাই সুকেশ ঘোষ, তাঁর স্ত্রী প্রতিমা ঘোষ, ছেলে অভি, দুই মেয়ে অপরূপা এবং অনুরূপা। দিলীপবাবু গোপীবল্লভপুর বা ঝাড়গ্রামে গেলেই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি পৌঁছে যান। বেশিরভাগ সময় সেখানেই সারেন খাওয়াদাওয়া। গত ডিসেম্বর মাসে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চালু হতেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করেছিল দুই পরিবার। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে কুলিয়ানা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে হীরকবাবুর স্ত্রী-পুত্র এবং সুকেশবাবুর পরিবারের সমস্ত সদস্য লাইন দিয়ে ছবি তোলেন। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডও নিয়েছেন তাঁরা। হীরকবাবু জানিয়েছেন, ‘ছবি তোলার দিন আমি মেয়েকে হাওড়ায় ছাড়তে গিয়েছিলাম। তাই ওই দিন ক্যাম্পে যেতে পারিনি। আমার স্ত্রী ও ছেলে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পেয়েছে। তবে, এই কার্ড আজ পর্যন্ত কাজে লাগেনি।’ সুকেশবাবুর দাবি, ‘বাড়ির সবাই কার্ড করার জন্য বলছিল, তাই আবেদন করেছিলাম। পরিবারের সবাই এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছে। তবে সুবিধা কী পাব জানি না। লাভ-ক্ষতি কী হবে, সেটা পরের কথা।’ এ নিয়ে দিলীপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উত্তর মেলেনি। কয়েকদিন আগে ঝাড়গ্রাম জেলার বিজেপি সভাপতি সুখময় শতপথীর পরিবারের সদস্যরাও এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেছেন। সুখময়বাবুর বাবা অবনী শতপথী, মা স্নেহলতা শতপথী, বোন অর্চনা শতপথী ও তাঁর কাকা-কাকিমা, জেঠু-জেঠিমা আড়াই ঘণ্টা লাইন দিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়েছিলেন। সুখময়বাবুর বোন অর্চনার মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগের প্রশংসাও শোনা গিয়েছে।