৩দিন আগেই চুঁচুড়ার তালডাঙার গাঙ্গুলি পরিবার থেকে খোয়া যায় সোনার দুর্গামূর্তি। জানা যায়, ৭৮ বছর আগে এক জমিদার তৎকালীন গৃহকর্তা হৈমকুমার গাঙ্গুলিকে ওই মূর্তি দিয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রতি বছর মহাসমারোহে সেখানেই দুর্গাপুজো আয়োজিত হয়। ঘরের সিংহাসন অলংকারে সুসজ্জিত করে মা নিত্যদিনই পূজিত হতেন। তবে গত ৩০ তারিখ সন্ধ্যার পর থেকেই উধাও হয়ে যায় প্রায় ১০ ইঞ্চি লম্বা ওই সোনার মূর্তিটি। সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানানো হয় চুঁচুড়া থানায়। অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নামে চুঁচুড়া থানার পুলিস। পুলিস সন্দেহের বশে গতকাল আটক করে এই পরিবারের পরিচারিকা, তালডাঙার বুড়োশিবতলার বাসিন্দা বছর ৪০ এর আলোবতী দাসকে। আলোবতী পরিচারিকার কাজে নতুন। তাঁর মা দীর্ঘ ২০ বছর অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে গাঙ্গুলি বাড়ির দায়িত্ব সামলে এসেছেন। মায়ের বয়স হয়েছে, তাই সেই কাজে যোগদান করে তাঁর মেয়ে। দীর্ঘদিনের পরিচয়, তাই গাঙ্গুলি পরিবার আলোবতীকে কোনওভাবেই সন্দেহ করেনি। কিন্তু ৩০ তারিখের ঘটনার পর পুলিসের নজরে পড়ে আলোবতী। গতকাল তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিস। সূত্রের খবর, থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হঠাৎ চুরি যাওয়া দেবীমূর্তির একাংশ আলোবতীর অগোচরেই শাড়ির ভিতর থেকে নিচে পড়ে যায়। আর তা দেখেই চক্ষু চড়কগাছ পুলিসের। এরপর আলোবতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পারে, শিব-দুর্গা মূর্তিটির দুর্গার দিকের অংশ কেটে আলোবতী সুদের কারবারের সঙ্গী তথা তালডাঙা এলাকার বাসিন্দা অন্ময় দাসকে দিয়েছে। প্রায় ৩ লক্ষ টাকা দীর্ঘদিন ধরে আলোবতীর কাছে আটকে রয়েছে। দেনা কমাতেই তাকে মূর্তির একাংশ আলোবতী দিয়েছিল বলে পুলিসকে জানায়। এরপর পুলিস অন্ময় দাসকে তালডাঙা থেকে আটক করে। অন্যদিকে জানা যায়, সে মূর্তির সেই অংশটি তালডাঙারই একটি সোনার দোকানে দিয়েছে। সেই সোনার দোকানের মালিকের ইমারতী দ্রব্যের ব্যবসা রয়েছে। বাড়ি সংস্কারের জন্য সেখান থেকেই ইমারতি দ্রব্য নিয়েছিল সে। সেই ইমারতি দ্রব্যের মূল্য মেটাতে সোনার মূর্তির কিছুটা অংশ কেটে টুকরো টুকরো করে সোনার দোকানদারকে দেয়। সেইমতো এদিন রাতেই পুলিস আলোবতী ও তন্ময়কে সঙ্গে নিয়ে তালডাঙা মোড়ের ওই সোনার দোকানে হানা দেয়। এরপরই ওই দোকান থেকেই বাকি অংশটি উদ্ধার হয়েছে। তবে সেই অংশটি দোকানদার গলিয়ে ফেলেছে। এরপরই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। পুলিস জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, অন্ময় নিজের বাড়ির সোনা বলে প্রতিবেশী ওই সোনার দোকান মালিককে মূর্তির অংশ দেওয়ায় দোকানদারকে নির্দোষ হিসাবে ছেড়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতেই পুলিসের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় অসুস্থ হয়ে যায় আলোবতী। ফলে তাকে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে অন্ময় দাসকে আজ হেফাজতে চেয়ে চুঁচুড়া আদালতে তোলা হবে বলে জানা গেছে।