মালদা

মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ভয়ে আতঙ্ক গ্রামবাসী

হক জাফর ইমাম, মালদাঃ মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে চরমভাবে চিন্তিত এবং ক্ষুব্ধ কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের সাদিপুরএলাকার বাসিন্দারা । বহুদিন আগেই এই গ্রামে আর্সেনিকের বিষাক্ত ছোবলে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে গোটা গ্রাম গত এক দশকে শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এলাকায়। সম্প্রতি এহেন আর্সেনিক প্রবন এলাকায় মোবাইল টাওয়ার তৈরী করা কে কেন্দ্র করে গোটা গ্রাম বিরোধিতা করে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছে ।গোটা মালদা জেলার মধ্যে কালিয়াচক দুই নম্বর ব্লকের বাঙ্গীটোলা অঞ্চলের সাদিপুর এলাকার সবচেয়ে আর্সেনিক প্রবণ এলাকা। এলাকায় গত এক দশকে আর্সেনিকের প্রভাবে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় মানুষের দাবি। সাদিপুর কামারপাড়া , ঋষি পাড়া, পাঠানপাড়া, সিংপাড়া, সহ এলাকায় মানুষদের মনে এখনো আর্সেনিকের আতঙ্ক চরমভাবে গ্রাস করে করে আছে। এই অবস্থায় গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার তৈরি করাকে কেন্দ্র করে চরম আতঙ্কে গ্রামবাসীরা গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ এমনিতেই গোটা গ্রাম এ আর্সেনিকের শহরে প্রতিটি পরিবারেই মানুষ শারীরিক ভাবে চরম সংকটে পড়েছে তার উপর যদি টাওয়ার তৈরি হয় তবে টাওয়ারের রেডিয়েশন থেকে মানুষের আরও শারীরিক ভাবে ক্ষতি হবে ।সবচেয়ে ক্ষতি হবে শিশুরা গোটা বিষয়টি জানিয়ে গ্রামবাসীরা স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও এবং প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ফলে বাঙ্গিটোলা অঞ্চলের এই গ্রামগুলোতে মহিলা সহ গ্রামবাসীরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামবাসীদের একটাই আবেদন এইটা কি গ্রাম থেকে একটু দূরে তৈরি করা যেত না ? এখন প্রশ্ন উঠেছে এই টাওয়ারের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট কি গ্রাম পঞ্চায়েত দিয়েছে ? যদি দিয়ে থাকে তাহলে গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে আর্সেনিকের ছোবলে মৃতপ্রায় শয়ে শয়ে মানুষের জীবন থেকে কি রোজগার টা টাই বড় কথা। এই প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন” এ ধরনের অভিযোগ আমরা ওই গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে পেয়েছি । সাদিপুর এলাকায় গত দুই দশক থেকে আর্সেনিকের ছোবলে প্রতিটি বাড়িতেই অসুস্থ রোগী আছে। বছর বছর আর্সেনিকের জন্য ওই গ্রামগুলোতে মানুষ মারা যাচ্ছে ।মানুষের মৃত্যুর বদলে আমরা টাকা রোজগার করতে পারি না। তাই আমিও চাই সেখানে টাওয়ারটি যেন না হয় ।আমি বিষয়টি নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে কথা বলব।” মালদা জেলার আর্সেনিক মুক্ত এলাকা গুলির মধ্যে কালিয়াচক ১,২,৩ নম্বর ব্লক অন্যতম। এই ব্লক গুলোতে আর্সেনিকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি । আর্সেনিকের প্রভাবে গত দুই দশকে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ । কালিয়াচক ২ নং ব্লকে র বাঙ্গীটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাদীপুর, পঞ্চানন্দপুরের ও রথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে র বেশ কিছু অংশে আর্সেনিকের প্রভাব সবচে বেশি । এলাকায় আর্সেনিক সমস্যা মিটাতে মোথাবাড়ি বিধানসভা এলাকার বাঙ্গীটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতে সাদিপুর পানীয় জল প্রকল্প নামে একটি চালু হয় প্রায় এক দশক আগে। এছাড়াও রাজনগর ও বৈষ্ণবনগরে আরো দুটি আর্সেনিক মুক্ত প্লান্ট রয়েছে। কিন্তু দিনের পর দিন গ্রামগুলোতে সঠিকভাবে পানীয় জল পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এমনকি বহু গ্রামে আর্সেনিক আর্সেনিকমুক্ত জলের পাইপ লাইন ই পৌঁছায়নি।এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে দিনের পর দিন খুব এর মাত্রা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছিল গত এক বছর আগে সরকারি প্রকল্প মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজ করার সময়। বহু মানুষ নিজের বাড়িতে শৌচাগার বানাতে অস্বীকার করেন। সরকারি আধিকারিক রা তাদের বুঝিয়ে কোনোক্রমে নিজস্ব করতে সক্ষম হন। পানীয় জল সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বহু গ্রামে এই প্রকল্প সফল করা হয়েছিল। পানীয় জল সমস্যা সমাধান এখনো হয়নি । এখনো পানীয় জলের পাইপ লাইনে এইসব গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে । তাই আগামী নির্বাচনে প্রধান দাবিদার তথা প্রার্থী আবু হোসেন খান চৌধুরী ও তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন সাধারণ মানুষের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে । স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু কুমার সিংহ প্রতিমা রবিদাস, রসেল সেখ জানিয়েছেন এখানে এক দশক আগেই আর্সেনিক মুক্ত জলাধার তৈরি হলেও বেশ কিছু গ্রামে পাইপলাইন যায়নি। যে সমস্ত গ্রামে গেছে সেখানে প্রতিদিন সঠিকভাবে পানীয় জল সরবরাহ হয় না। সাদিপুর কামারপাড়া আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী দেখতে পাওয়া যায় এই গ্রামগুলোতে গত এক দশকে আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল এখনো অব্যাহত । এখনকার মানুষ এখনো আর্সেনিকের আতঙ্ক দিন কাটাচ্ছে । তার উপর গোদের উপর বিষফোড়ার মতো এই টাওয়ার বসছে । আমাদের ধারনা টাওয়ারের রেডিয়েশনের জন্য গ্রামে র শিশু ও বৃদ্ধদের চরম ক্ষতি করবে ।তাই আমরা চাই এই টাওয়ার যেন গ্রাম থেকে একটু দুরে বসে ।” বাঙ্গীটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতে র প্রধান সান্তারা খাতুন জানান, “এটা এখন আমাদের এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা । মোবাইল টাওয়ার নিয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ।”