ট্রেনে চেপে কলেজে যাওয়ার পথে মাঝ রাস্তা থেকেই উধাও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্রী ৷ মাঝরাস্তা থেকে তাঁর ব্যাগ, মোবাইল ফোন, এমনকি সঙ্গে থাকা 1300 টাকাও পাওয়া গিয়েছে ৷ কিন্তু সেই ছাত্রীর কোনও খোঁজ নেই ৷ তিনি কোথায় গেলেন, তা চিন্তা করে ঘুম উড়েছে পরিবারের লোকজনের ৷ নিখোঁজ ওই ছাত্রীর বয়স 20 বছর ৷ বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায় ৷ বাবা পেশায় ব্যবসায়ী ৷ মেয়েটি ছোট থেকে পড়াশোনায় বেশ ভালো ৷ তাই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর তাঁকে ভর্তি করা হয় ঝাড়খণ্ডের দুমকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৷ গত সপ্তাহে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি ৷ রবিবার সকালে তিনি কলেজে ফেরার জন্য হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশন থেকে ডাউন কুলিক এক্সপ্রেসে চাপেন ৷ রামপুরহাট থেকে দুমকাগামী ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁর ৷ ট্রেন মালদা টাউন স্টেশনে ঢোকার আগেও মোবাইল ফোনে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি ৷ তারপর থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ নেই বলে অভিযোগ ৷ বিকেল নাগাদ ফরাক্কার এনটিপিসি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, ওই ছাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল-সহ সমস্ত কিছু নেতাজি সেতুর উপর পাওয়া গিয়েছে ৷ এক ব্যক্তি সেসব পেয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে জমা দিয়েছেন ৷ পুলিশ মারফত এই খবর পেতেই মাথায় বাজ পড়ে পরিবারের লোকজনের ৷ তাঁরা হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, “রবিবার মেয়ে কুলিক এক্সপ্রেসে রামপুরহাট পর্যন্ত যাচ্ছিল ৷ ওর কাছে রামপুরহাট পর্যন্ত টিকিট ছিল ৷ সেখান থেকে দুমকার ট্রেনে ওর কলেজে ফেরার কথা ছিল ৷ এনটিপিসির নেতাজি সেতুর উপর ওর সমস্ত জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে ৷ এমনকি কলেজ ফেরার সময় ওকে আমি 1300 টাকা দিয়েছিলাম, সেটাও পাওয়া গিয়েছে ৷’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ট্রেন মালদায় ঢোকার আগে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ওর কথা হয়েছে ৷ মেয়ে কোথায় গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ আমাদের সন্দেহ, মেয়েটাকে অপহরণ করা হয়েছে ৷ ওর সঙ্গে কোনও ছেলের সম্পর্কও তেমন ছিল না ৷ পুলিশ আমার মেয়েকে উদ্ধার করে দিক, এটাই চাই ৷” ওই ছাত্রীর জেঠু বলেন, “ট্রেনে চাপার পর মেয়েটা কোথায় নিখোঁজ হয়ে গেল বোঝা যাচ্ছে না ৷ আমাদের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা ট্রেন থেকেই আমার ভাইঝিকে অপহরণ করেছে ৷ তা না হলে ওর ব্যাগ, ফাইল, সমস্ত কাগজপত্র, মোবাইল ফোন, টাকাপয়সা ও ফেলে যাবে কেন ? মোবাইল ফোনটা লক হয়ে রয়েছে ৷ পুলিশ ফোনটি খতিয়ে দেখলেই অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে ৷ মেয়েটা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভালো ছাত্রী ছিল ৷” রাতে তাঁর বাড়িতে যান এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ তিনি বলেন, “মেয়েটির পরিবারের লোকজন আমার কাছে এসেছিলেন ৷ আমি পুলিশকে গোটা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলেছি ৷ এনিয়ে এসপির সঙ্গেও কথা বলেছি ৷ প্রশাসন বিষয়টি দেখছে ৷” হরিশ্চন্দ্রপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, “এনিয়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফরাক্কা থানার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ এবং দুমকা থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ৷ বিষয়টি জানানো হয়েছে রেল পুলিশকেও ৷ আমরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি ৷ আশা করছি, দ্রুত ওই তরুণীকে উদ্ধার করা যাবে ৷” পরিজনদের আশঙ্কা, ট্রেন থেকেই তাঁকে কেউ বা কারা অপহরণ করেছে ৷ মেয়েকে ফিরে পেতে তাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন বাবা ৷ খবর পেয়েই ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যের মন্ত্রী ৷ তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, যেভাবেই হোক, ওই ছাত্রীকে খুঁজে বের করা হবে ৷ সেই আশ্বাস দিয়েছে পুলিশও ৷