কলকাতা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লকার থেকে উধাও সওয়া কোটির হিরে ও গয়না, পার্কস্ট্রিট শাখার মহিলা ম্যানেজার ও দাদা গ্রেফতার

 ব্যাঙ্কের লকারে গচ্ছিত অলঙ্কারের সুরক্ষা যার হাতে, সে-ই চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত। এ যেন ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’! খাস কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লকার থেকে গায়েব প্রায় সওয়া কোটি টাকার হিরে, সোনার, রুপোর গয়না। সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের লকার ম্যানেজার ও তার দাদাকে গ্রেপ্তার করল কলকাতা পুলিস। ধৃতদের নাম মৌমিতা শী ও মিঠুন শী। পার্ক স্ট্রিটের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বছরচারেক ধরে কর্মরত মৌমিতা। অভিযুক্তদের কাছ থেকে বিপুল নগদ-অলঙ্কার, একটি গাড়ি ও একাধিক মোবাইল সহ নানা নথিপত্র উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে তিনটি লকার ভাড়া নেওয়া ছিল শশী পাসারি নামে এক ব্যবসায়ীর। ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ ডিসেম্বর। সেদিন লকার থেকে গয়না নিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চাবি ঘোরাতেই দেখা যায়, লকার গড়ের মাঠ। ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার হিরে ও সোনার গয়না গায়েব। এরপরেই প্রথমে ব্যাঙ্ক, পরে পার্ক স্ট্রিট থানার দ্বারস্থ হন তিনি। তদন্তে নামেন গোয়েন্দারা। ওই ব্যাঙ্কে লকার ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা মৌমিতার উপরেই প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয় পুলিসের। কিন্তু, কোনও ‘কংক্রিট’ প্রমাণ না থাকায় তাকে পাকড়াও করা যায়নি। তবে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনে কড়া নজরদারি চালান গোয়েন্দারা। তাতেই সন্দেহ আরও বাড়ে।   লালবাজার সূত্রে খবর, গত বছর পুজোর পর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিটের ওই ব্যাঙ্কে লকারের মেরামতি চলছিল। সেই সময় আচমকাই মোটা টাকার লেনদেন চলেছে মৌমিতার অ্যাকাউন্টে। জমা হয় প্রায় কোটি টাকারও বেশি। তার একাংশ পরে চলে যায় অন্য একটি অ্যাকাউন্টে। সেটি মৌমিতার দাদা মিঠুনের। জমা পড়া সেই টাকা দিয়ে সে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা দামের একটি গাড়ি কেনে। মৌমিতাও প্রায় ৭৪ ভরি সোনার গয়না কেনে। দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পুলিস। তার ভিত্তিতে দাদা-বোনকে লালবাজারে আটক করে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। কড়া পুলিসি প্রশ্নের সামনে ভেঙে পড়েন তারা। তদন্তকারীদের দাবি, চুরির কথা স্বীকার করেছে দুই অভিযুক্ত। জেরায় মৌমিতা জানিয়েছে, মেরামতির সময় লকারের সমস্ত চাবি জমা ছিল তার কাছে। তা দিয়ে সে বিকল্প চাবি তৈরি করে নেয়। পরে এক সপ্তাহ ধরে গয়না হাতায়। সেই টাকায় গাড়ি কিনে কোল ইন্ডিয়াতে ভাড়া খাটাচ্ছিল মিঠুন। গাড়িটিকেও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস। শনিবার ধৃতদের আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।