বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নজির গড়তে চলেছে কলকাতা। কলকাতার মুকুন্দপুরের মেডিকা হাসপাতালে প্রথমবার ফুসফুস প্রতিস্থাপন হতে চলেছে। সমগ্র বাংলা তথা পূর্ব ভারতে এই প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপন করে ইতিহাস গড়ার পথে কলকাতার চিকিত্সকরা। এখানেই শেষ নয়, এই তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সুদূর সুরাট থেকে বিমানে করে নিয়ে আসা হয়েছে প্রতিস্থাপনযোগ্য ওই ফুসফুসটি। এরপর সেটি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গ্রিন করিডোর করে। সেখানেই এক পোস্ট কোভিড রোগীর শরীরে এই ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হবে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, যার শরীরে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে ১০৩ দিন ধরে একমো সাপোর্টে ছিলেন। করোনার প্রভাবে তাঁর ফুসফুসটি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। এমতাবস্থায় গুজরাতের সুরাট থেকে মেলে একটি প্রতিস্থাপনযোগ্য ফুসফুস। যার কাছ এই ফুসফুসটি পাওয়া গিয়েছে তিনি সোমবারই ব্রেন স্ট্রোকে প্রাণ হারিয়েছেন। ফুসফুসের খোঁজ পাওয়ার পরেই দ্রুত তা কলকাতা বিমানবন্দরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিস্থাপনযোগ্য ফুসফুসটিকে কলকাতায় নিয়ে এসেছে ইন্ডিগোর একটি বিমান। সোমবার রাত ১০টায় কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমানটি। এরপরেই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রিন করিডোর করে মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, মানুষের শরীরে যে সমস্ত অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায় ফুসফুস প্রতিস্থাপন তার মধ্যে সব থেকে জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এই অস্ত্রপ্রচারটি করতে ৬-৮ ঘণ্টা সময় লাগে। সেই সঙ্গে যে ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে তিনি সম্প্রতি করোনামুক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে এই অস্ত্রপ্রচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সফল ভাবে বাংলায় এই প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাতভর প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার চলে। আজ সকাল ৬টায় প্রতিস্থাপন সম্পূর্ণ হয়। রোগী একমো সাপোর্টে রয়েছেন। অস্ত্রোপ্রচারের পর রোগীকে ৭২ ঘন্টার নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চিকিত্সক কুণাল সরকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, “আগামী দিনে প্রতিস্থাপন বিষয়টিতে আমাদের আরও নজর দিতে হবে। আরও প্রচার বাড়াতে হবে। রাজ্যি সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। মূলত প্রতিস্থাপনের পর যে যে বিষয় দেখা হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে তা হল, রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা বা প্রতিস্থাপনের পর ফুসফুস সঠিকভাবে গ্রহীতার শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে কিনা। অস্ত্রোপ্রচারের জায়গাটিতে ইনফেকশন হচ্ছে কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে।”