বিধানসভার অনুষ্ঠানে বিআর আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করার জন্য গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই নতুন করে তরজা রাজ্যপালের। ‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই’ দাবি করে, রাজ্য সরকারকে ফের নজিরবিহীন আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। উপাচার্য নিয়োগ থেকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সহ নানা ইস্যুতে মঙ্গলবার আবারও রাজ্য সরকারকে একহাত নিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । আজ রাজ্য বিধানসভায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি । সেখানেই নানা বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন রাজ্যপাল। তবে সরকারি অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্যপালের সম্মতি না নিয়েই ২৫ জন উপাচার্য নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার । ধনকড়ের তোপ, “দেশের কোথাও এই ভাবে উপাচার্য নিয়োগ হয় না । রাজ্যের শিক্ষার উন্নতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য উপাচার্যদের বৈঠকে ডেকেছিলাম । কিন্তু কেউ আসেননি । দেশের কোথাও এ রকম হয় না ৷” ধনকড়ের দাবি, “এটা তিনি করতে পারেন না ।” সরকার রাজ্যপালের সম্পর্কে মিথ্যে তথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করে ধনকড় বলেন, “বলা হচ্ছে যে, হাওড়া পৌরসভা-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল রাজভবনে আটকে রয়েছে । এসব সর্বৈব মিথ্যে । একটি বিলও
আমরা অফিসে আটকে নেই । দায়িত্ব নিয়ে বলছি ।” এখানেই না-থেমে মঙ্গলবার সরকারি অনুষ্ঠানে রাজ্যের আমলাদেরও নিশানা করেন ধনকড় ৷ তাঁর অভিযোগ, “সরকারি আধিকারিকরা তাঁদের সাংবিধানিক কর্তব্য ভুলে গিয়েছেন । মুখ্যমন্ত্রী ভুলে গিয়েছেন যে তিনি রাজ্যপালের কাছে দায়বদ্ধ । নইলে কেন রাজ্যপালেকে এত অপমান !” রাজ্যে আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন চলছে বলে তোপ দেগে তিনি ফের তুলে আনেন ভোট পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ ৷ তিনি বলেন, “ভোটাররা রাজ্যে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন না । নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসই তার প্রমাণ ৷” রাজ্যপাল এ দিন একহাত নেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। দিনের পর দিন অধ্যক্ষ রাজ্যপালকে ব্ল্যাকআউট করছেন বলে অভিযোগ তাঁর । রাজ্যপালকে পাল্টা জবাব দিয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিআর আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা দিতে এসে তিনি এরকম একটা সাংবাদিক বৈঠক করলেন । সাংবাদিক বৈঠক করতে হলে তিনি রাজভবনে করতে পারতেন । কিন্তু তা না করে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এসে যে ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করলেন, এটা তিনি ঠিক করলেন না । এটা রাজ্যপালের শোভা পায় না ।” হাওড়া পৌরসভা বিল নিয়ে অধ্যক্ষ এদিন ফের বলেন, সেই বিলে এখনও রাজ্যপাল সম্মতি দেননি ৷ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “তিনি বলছেন যে এই বিলটি রাষ্ট্রপতি নামঞ্জুর করেছে । অথচ এই মর্মে আমরা কোনও চিঠি পাইনি । রাজ্যপালের চেষ্টা থাকে সবসময় যে কোনও ভাবে বিভিন্ন বিলকে দেরি করে দেওয়ার ।” রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে স্থান-কাল নিয়ে। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ‘বিধানসভা চত্বরে, আম্বেদকরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হয়ে কথা বলেছেন। যা রাজ্যপালের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত নয়। উনি রাজ্যপালের পদের অমর্যাদা করেছেন।’