কলকাতা ক্রাইম

RG Kar: ‘সঞ্জয় একাই ধর্ষণ করেছিল নির্যাতিতাকে, আরজি করে গণধর্ষণ হয়নি’, হাইকোর্টে জানাল সিবিআই

শেষমেশ কলকাতা পুলিশের দাবিকেই স্বীকৃতি দিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা – সিবিআই। আরজি কর কাণ্ডে কোনও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে আগেই দাবি করেছিল কলকাতা পুলিশ। এবার সেই একই কথা বলল সিবিআই! শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট দিয়ে এমনটাই জানাল সিবিআই ৷ খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় কলকাতা পুলিশ কতদূর পর্যন্ত তদন্ত করেছিল সেই কেস ডায়েরি সিবিআইকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ অন্যদিকে, এদিনই শিয়ালদা আদালতে তিন পাতার ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দিয়েছে সিবিআই । ময়নাতদন্ত ও ইনকোয়েস্ট রিপোর্টে কী উল্লেখ করা হয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত কতজন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই সেই তালিকা আগামী ২৩ এপ্রিল আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তাঁর নির্দেশ, সিবিআই কেন তদন্ত আর এগোতে পারছে না সেটা রিপোর্ট দিয়ে তাদের জানাতে হবে । তদন্তের জন্য কেন এত সময় লাগছে সেটাও আদালতে জানাতে হবে। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর গত শুনানিতে যতগুলো প্রশ্ন তুলেছিল আদালত, রিপোর্টে তার উত্তর দেওয়া হয়েছে । একইসঙ্গে হাইকোর্ট নির্যাতিতার বাবা-মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আলাদা করে তদন্তে তত্ত্বাবধান করতে পারে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। এরপর বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানতে চান, যদি এটা গণধর্ষণ হয়ে থাকে তাহলে সেটার কি তদন্ত হয়েছে ? জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছিল। ১৪ জনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, এটা গণধর্ষণ নয় । অর্থাৎ, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭০ ধারার মধ্যে পড়ে না। তবে সিবিআই এখানে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পেয়েছে। সেটা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে । এরপর বিচারপতি জানতে চান, তাহলে কী করে বলছেন এটা গণধর্ষণ নয় ? সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, তথ্য প্রমাণ লোপাট-সহ অন্য বিষয়ের তদন্ত করা হচ্ছে । সেই সময় একাধিক কর্তা-ব্যক্তিদের জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছিল সেই বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে । এরপর বিচারপতি বলেন, অর্থাৎ, মৃত্যুর পরের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। কতদিন সময় লাগবে ? সিবিআইয়ের আইনজীবীর জবাব, সেটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় । শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তদন্তের পর খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই । সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালত সাজা ঘোষণা করেছে। ফলে খুন ও ধর্ষণের পরবর্তী তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে না হাইকোর্ট। তবে খুন ও ধর্ষণের পর যদি তথ্য প্রমাণ লোপাট হয়ে থাকে তাহলে সে বিষয়ে তদন্ত হতেই পারে । এরপর সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ডিএনএ টেস্ট কি একজনের জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছিল নাকি একাধিক ব্যক্তির কথা বলা আছে ? জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, একজনেরই জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ঘটনাস্থলে একজন পুরুষেরই ডিএনএ পাওয়া গিয়েছে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্র জানান, আরজি কর হাসপাতালের যে মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ফোন করে নির্যাতিতার বাবা-মাকে খবর দিয়েছিলেন তাঁকে এখনও পর্যন্ত সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। দাবি খারিজ করে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, তদন্ত চলাকালীন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । এরপর মামলার কেস ডায়েরি আছে দেখতে চান বিচারপতি । তাতে সম্মত হন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আইনজীবী । এদিন সিবিআই-এ দাবি, এই সমস্ত বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা করে ও বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনে তারা নিশ্চিত যে আরজি করে গণধর্ষণ করা হয়নি, ধর্ষণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই যুক্তি শুনে বিচারপতি জানতে চান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নমুনার ডিএনএ প্রোফাইলের রিপোর্ট কী বলছে? সেটা কি একজন ব্যক্তির উপস্থিতিকেই প্রমাণ করছে? এর জবাবে সিবিআই জানায়, ওই ডিএনএ প্রোফাইল একজন ব্যক্তিরই (পুরুষ) এবং সেই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় রায়। এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে আর কারও ডিএনএ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর বিচারপতি জানতে চান, সিবিআই এখন তাহলে কীসের তদন্ত করছে? এর উত্তরে সিবিআই জানায়, এই ঘটনার নেপথ্যে কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথাও কোনও তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে কিনা, তেমনটা হয়ে থাকলে কারা এবং কেন সেটা করেছে, সেই সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর জন্য আরজি করের চিকিৎসক, নার্স ও নিরাপত্তারক্ষীদের পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে আদালতকে সিবিআই-এর পক্ষ থেকে অবগত করা হয়েছে।