জেলা

অমিত শাহর কাছে ধর্ম শিখবো না, বাংলাকে ধমকে-চমকে লাভ নেই: মমতা

নামখানার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেন অমিত শাহ। এদিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে কর্মী সম্মেলন থেকে কড়া গণ্ডায় সব আক্রমণের জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাহের পিসি-ভাইপোর আক্রমণের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জয় শাহের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিধায়ক, জেলা স্তরের নেতাদের বলব, এই জেলার উপর ওদের লোভ রয়েছে। কুমির এবং বাঘ বেরিয়ে মানুষকে কামড়ালে টনক নড়ে না বিজেপির। আমফানের জন্য একটা পয়সাও দেয় না কেন্দ্র। আমপানের সময় নাটক করে ঘুরে গেলেন। বললেন ১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। কত কোটি নিয়ে যাচ্ছেন আর ১ হাজার কোটি টাকা দেখাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, রথে চড়ে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। এখন দেখছি এরা জগন্নাথ হয়ে গিয়েছে। হাতও আছে। রথযাত্রাও ফ্লপ, নেতাদের মিটিংও ফ্লপ। বাইরে থেকে লোক এনে সভা করতে হয়। আর প্রতিদিন নাকি ওদের উপর হামলা হয়! পুরনো সবাই তো চলে গিয়েছে। কয়েক জন নতুন গিয়ে জুড়ে বসেছে। এঁচোড়ে পাকাগুলোই বিজেপি-কে খেয়ে নেবে। তোমাদের নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনই নেই আমার। ২০২১-এ সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতব আমরা। বাংলাকে ধমকে-চমকে লাভ নেই। মানুষের কাছে মাথা নত করব আমি। বিজেপির কাছে মাথা নত করার আগে মৃত্যু ভাল। তিনি আর ও বলেন, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে দেখুন, তিনটি মেয়ের উপর কী অত্যাচার হয়েছে। আগে দিল্লি সামলাও। কৃষকদের কী ভাবে মেরেছো? কৃষকদেরও তো সামলাতে পারোনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রাজনীতি করতে হলে হাজার বার জন্মাতে হবে। আর এই চেহারায় তা হবে না। নাদুস-নুদুস, ফানুস-ফানুস চেহারা। গঙ্গাসাগর দেখতে গিয়েছেন বিজেপির একজন নেতা। তিনি নামেই দু’নম্বর। নাম বলব না। উনি বলেছেন, ‘গঙ্গাসাগর ইতনা খারাব’। কোথায় ছিলে? লোক যাওয়ার যোগ্য ছিল না। একটা পয়সা দিয়েছ? ৬-৭ বছর ক্ষমতায় রয়েছ। নোটবন্দি, ঘরবন্দি করেছ, এলপিজি, পেট্রলের দাম বাড়িয়েছ, দাঙ্গা করিয়েছ। আর কী করেছ? খালি পিসি-ভাইপো করছে। আগে ভাইপোর সঙ্গে লড়াই করে দেখাও। তারপর আমার সঙ্গে লড়বে। অমিত শাহের ছেলে কী করে ক্রিকেটের মাথায় বসল? কী করে কোটি কোটি টাকা করল? সেও তো আমার ভাইপো। বলছে দুর্গাপুজো করতে দেন না মমতা। এমনি এমনি ক্লাবগুলো ৫০ হাজার টাকা করে পাচ্ছে! ওদের নেতারা তো দুর্গা কে তা-ই জানে না। খালি বড় বড় কথা। হিন্দু ধর্ম! আমাদের হিন্দু ধর্ম শেখাবেন? আমরা কেউ হিন্দু নই? কান ধরে হিন্দু ধর্ম শিখিয়ে দিতে পারি আমরা। এখানে বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, সারদার জন্ম। চোরের মায়ের বড় গলা। সবচেয়ে বড় চোর, তার আবার বড় গলা। বলছে জিতবে। কী করে জিতবে? শুধু কলা পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, অভিষেক বিশেষ গুরুত্ব পায় না আমার কাছে। হাজরায় যখন আমাকে মারা হয়েছিল, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে একাই কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে মিছিল করত। স্লোগান দিত, দিদিকে কেন মারলে জবাব দাও। তার জন্যই ওকে রাজনীতিতে এনেছি। তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো বিদেশে চলে যায়। আমাদের ছেলেমেয়েরা এই মাটিতে থেকে লড়াই করে। আমাদের ছেলেমেয়েরাও বিদেশ যেতে পারত! অভিষেককে দুর্ঘটনা করে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়নি?আজও একটা চোখে দেখতে পায় না অভিষেক। আমার পরিবার এমন কোনও কাজ করবে না, যাতে বাংলার মানুষের ক্ষতি হবে। আপনাদের অসম্মান হবে। প্রত্যেক পরিবারই বড় হয়। আমাদের পরিবারও চার প্রজন্ম ধরে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। প্রতিদিন আমার জন্য অভিষেককে কথা শুনতে হয়। আমার খারাপ লাগে। আমার বাড়ির মেয়েদের আর ছোটদের গালাগালি দেবে না। বড়দের যত খুশি গালাগাল দাও। অভিষেককে উপ-মুখ্যমন্ত্রীও করিনি, দলের সভাপতিও করিনি। লোকসভাতেও দাঁড়াতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, তুই দলের কাজ কর। তোকে রাজ্যসভায় পাঠাব। কিন্তু ও বলেছিল, মানুষের ভোটে আমি জিততে চাই। রাজ্যসভায় পাঠানো তো আমার হাতের মুঠোয় ছিল। আমাদেরটা সামনে থেকে দেখা যায় বলে। আর তোমাদের ছেলেমেয়েরা কী করে জানা নেই তাই। আগুন নিয়ে খেলবে না। আমার সঙ্গে পেরে উঠবে না।