যাবতীয় ত্রাণকার্য প্রশাসনের হাতে থাকবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার সরকারি আধিকারিকদের সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড দুই ২৪ পরগনা। শুক্রবার পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়ে মমতা জানিয়ে দিলেন, ত্রাণ নিয়ে কোনও রকম ‘বঞ্চনা’ সহ্য করবেন না তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ত্রাণ বণ্টণে কোনও রকম ‘কার্পণ্য’ চলবে না। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে দেখতে শুক্রবার কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক রয়েছে মমতার। তার আগে সকালে দুই ২৪ পরগনার পরিস্থিতি তদারকি করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। প্রথম উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জে পৌঁছন। সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকে বলেন, ”ত্রাণ নিয়ে কোনও বঞ্চনা সহ্য করব না আমি। খাবার-দাবার, ত্রিপল বণ্টণে কার্পণ্য করা চলবে না। কারণ এ সব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে সরকারের।” কোভিড পরিস্থিতিতে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের নিরাপত্তায় জোর দিতে বলেছেন মমতা। আশ্রিত সকলকে বিশুদ্ধ পানীয় জল, মাস্ক এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, আমপান পরবর্তী পরিস্থিতির মতো এ বারও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর একটি দল বাংলায় আসছে। ত্রাণশিবিরগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখবে তারা। ত্রাণশিবিরে আশ্রিত গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্য বাচ্চাদের খাবারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিঙ্গলগঞ্জের বৈঠকে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহানও। সেখানে ব্যারাকপুর, বারাসত, বনগাঁ এবং বসিরহাট-কে চারটি সাব ডিভিশনে ভেঙে ত্রাণকার্য চালানোর পরামর্শ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ”চারটি ভাগ করে নোডাল অফিসারদের দায়িত্ব দিতে হবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান রাজ্যকে জানাবেন তাঁরা। সেই অনুযায়ী ১ থেকে ৮ জুলাই দুয়ারে ত্রাণ পরিষেবা পাবেন ক্ষতিগ্রস্তরা। সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে। এ ব্যাপারে কোনও সমস্যা হলে ওই নোডাল অফিসাররাই দায়ী থাকবেন। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ‘যশ’ আছড়ে পড়ার আগে ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। শুক্রবার তিনি জানান, সন্দেশখালি, ধামাখালি, সাগরের মতো এলাকা দুর্যোগের কবলে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ বাড়ি ধূলিসাত্ হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি, ৭ হাজার জলাশয়, ৫৫টি বাঁধ এবং ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা। ত্রাণের টাকা ঠিক মতো খরচের দিকে নজর দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বলেন, ”আমি অর্থ দফতরকে বলব, আমফানের সময় যে কাজ হয়েছে সেগুলোর অবস্থা কী রকম রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে। এত টাকা আমি জলে ঢালব না। সেচ দফতরকে বলব, আগে থেকে টাকা ছাড়বে না। একটা টাস্ক ফোর্স তৈরি করো। সব খতিয়ে দেখে তারপর টাকা ছাড়বে।”