গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়ায় দুই পুলিশ কর্মীকে জখম করে গ্যাংস্টার পালানোর ঘটনার প্রেক্ষিতে গোটা বাহিনীকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হওয়ার নিদান দিলেন ডিজি রাজীব কুমার। দুষ্কৃতী দমনে পুলিশকে যে এবার ‘দাবাং’ ভূমিকায় দেখা যাবে, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট করে দিয়েছেন ডিজি। তাঁর হুঁশিয়ারি-‘দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে দুটো গুলি চালালে, পাল্টা চারটে গুলি ছুটে যাবে সার্ভিস রিভলভার-রাইফেল থেকে। সাধারণ মানুষের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকে পুলিস। তারপরও যদি পুলিসের উপর হামলা হয়, আমরা তার জবাব দিতে তৈরি। এর জন্য তারা প্রশিক্ষিত।’ খুনে অভিযুক্ত সাজ্জাক আলমের পালানোর ঘটনার তদন্তে বৃহস্পতিবার পাঞ্জিপাড়া পরিদর্শন করেন ডিজি। সঙ্গে ছিলেন এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। শ্যুটআউটের ঘটনায় জখম এএসআই এবং কনস্টেবল এখন শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের দেখতে পাঞ্জিপাড়া থেকে সেই হাসপাতালে যান ডিজি। এই পর্বেই বিচারাধীন বন্দিদের আদালতে হাজির করানো সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর। ঠিক হয়েছে, শুনানির সময় বিচারাধীন বন্দিদের ভার্চুয়ালি আদালতে হাজির করানো হবে। কেবলমাত্র আদালত নির্দিষ্ট করে কাউকে সশরীরে হাজির করাতে বললে এর অন্যথা হবে। নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে এদিন রায়গঞ্জ সেন্ট্রাল জেলের বিচারাধীন বন্দিরা ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ডিজি এদিন রাতে রয়েছেন রায়গঞ্জে। সাজ্জাক আলম বন্দি ছিল সেখানকার সেন্ট্রাল জেলে। আজ, শুক্রবার জেল পরিদর্শনে যেতে পারেন ডিজি। ইতিমধ্যেই জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভিজিটর বুক চেয়ে পাঠিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট, গুলি চালিয়ে পালানোর ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছিল সেখানেই। সাজ্জাককে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে ইসলামপুর মহকুমা আদালতে। এদিকে ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সাজ্জাক কিন্তু অধরাই। খোঁজ নেই দুঃসাহসিক অপারেশনে তাকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাহায্যকারী আব্দুল হুসেনেরও। রায়গঞ্জ জেলেই সাজ্জাকের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ হয় আব্দুরের। এরপর আব্দুরকে বহরমপুর জেলে পাঠানো হলেও, রায়গঞ্জ জেল থেকেই সাজ্জাক ফোনে যোগাযোগ রাখত তার সঙ্গে। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছে আব্দুর। এই দু’জনের খোঁজ দিলে দু’লক্ষ টাকা নগদ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ছবি সম্বলিত পোস্টার সাঁটাচ্ছে ইসলামপুর ও রায়গঞ্জ পুলিস। বুধবার বিকেলে শ্যুটআউটের পর একরচালা কালীমন্দিরের সামনে থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পাঞ্জিপাড়ার দিকে দৌড়ে পালানোর সময় সিসি ক্যামেরায় ধরা সাজ্জাকের একটি ফুটেজ হাতে এসেছে পুলিসের। তাতে দেখা যাচ্ছে, কম্বল গায়ে দৌড়ে আসার পর্বে কিছুটা দূরে এসে এক সঙ্গীর সঙ্গে দেখা করছে সে। সেখানেই কম্বলটা ফেলে দেয়। তদন্তকারীরা বলছেন, এখানে আগে থেকে অপেক্ষারত এক সঙ্গীর মোটর সাইকেলে চেপে চম্পট দেয় সাজ্জাক। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওইদিন রাত ৮টার সময় তার সঙ্গে দেখা করে আব্দুর। সাজ্জাদের বর্তমান অবস্থান জানতে করণদিঘি থেকে তার স্ত্রীকে আটক করে জেরা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।