উত্তেজনার আবহে আজ ত্রিপুরায় পুরভোট। সকাল ৭টা থেকে শুরু ভোটগ্রহণ। চলবে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। আগরতলা পুরসভা, ১৩টি পুর পরিষদ-সহ ৬টি নগর পঞ্চায়েতে ভোটগ্রহণ হবে। মোট বুথ ৬৪৪টি। এর মধ্যে ৩৭০টি বুথ ‘অতি স্পর্শকাতর’ এবং ২৭৪টি ‘স্পর্শকাতর’। অশান্তি এড়াতে আগরতলা-সহ বিভিন্ন বুথে সি আরপিএফ এবং ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (TRS) বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তৃণমূল নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের উপর একের পর এক হামলার প্রতিবাদে পূর্ব আগরতলা থানা ঘেরাও করল তৃণমূল কর্মী, সমর্থকরা। ভোটের দিন সকাল থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। আর সেই অভিযোগকে সামনে রেখেই পূর্ব আগরতলা থানার বাইরে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তৃণমূল নেতারা। পরে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। আচার্য্য প্রফুল্যা চন্দ্র স্কুলের সামনে এই মুহূর্তে মোতায়েন প্রচুর পুলিশ আর সিআরপিএফ। সেখানেও ভোটারদের আটকানো হয়েছে এবং ওই বুথেই বৃহস্পতিবার সকালে এক তৃণমূল কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে বিজেপি কর্মীরা। আগরতলা ২১ নং ওয়ার্ডের ৫,৬,৮,৯,১০ বুথে (আনান্দ মার্গ স্কুল, গন্ধ স্কুল, রাম ঠাকুর পাঠশালা) ভোটারদের ভোট দিতে দিচ্ছে না।বহিরাগতদের জমায়েত সেখানে।প্রার্থী অলক ভট্টাচার্যী নিজে বুথ কেন্দ্রে ঢুকে পোলিং এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। ইলেকশন এজেন্টকেও হুমকি দিয়েছেন অলক ভট্টাচার্যী। ২১ নং ওয়ার্ডের সবগুলো বুথে ছাপ্পা ভোট চলছে।বহিরাগতরা বুথ কেন্দ্র ঘেরাও করে রেখেছে। বেশ কিছু ভোটারকে ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১,২ এবং ৩ নং ওয়ার্ডের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৪/৫টা বুথে এজেন্ট ঢুকে কিছুক্ষণ ভোট করলেও পরে তাদের বের করে দেওয়া হয়। মধ্যভুবনবনে পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে সব বহিরাগত। স্থানীয়রা রাস্তায়। ওরা বেছে বেছে বিজেপি সমর্থকদের ভোটার স্লিপ দিয়েছে। এবার ভোটার স্লিপ ছাড়া কাউকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দিচ্ছে না। স্লিপ থাকা সত্বেও সন্দেহ হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর বুথ থেকে সিপিআইএম সহ বিরোধী এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বহিরাগতরা। জানা যাচ্ছে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাপানিয়া হাসপাতাল চৌমুহনি সংলগ্ন এলাকায় কার্তিক চৌমুহনি থেকে ভোটারদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি দলের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে ১৪ বাধারঘাটের মাফিয়া রামু সরকার৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৭, ৮, ৯ এবং ১০ নম্বর বুথে পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে ২১ নং ওয়ার্ডে বিরোধী এজেন্টদের বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সুপ্রিম নির্দেশে আরও দু কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী যাচ্ছে ত্রিপুরায়। ভোট চলাকালীনই ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং সেই নির্দেশের ওপর ভিত্তি করেই আরও দু কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী যাচ্ছে ত্রিপুরায়। ত্রিপুরা পুরভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই প্রসঙ্গে
নির্দেশ দিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং ত্রিপুরার পুলিস কর্তাদের জানান, অবিলম্বে আগরতলার প্রতিটা বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এছাড়াও এদিন সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেহেতু সব বুথে CCTV ক্যামেরা নেই তাই সাংবাদিকদের প্রতিটা বুথে ঢুকতে দিতে হবে। ব্যালটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও ভোট উপলক্ষে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রয়েছে, গণনা পর্যন্ত সেই ব্যবস্থাই বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে। আগরতলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নং বুথে বিজেপির বিরুদ্ধে জোর করে ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। পাশাপাশি বেশ কিছু বুথে সিপিএম এবং তৃণমূলের পোলিং এজেন্টদের ব্যাপক মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আগরতলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১,২,৩ এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক উত্তেজনা এবং অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। মাত্র দু ঘণ্টা ভোটগ্রহণ হতে না হতেই মাথা ফাটল তৃণমূলের পোলিং এজেন্টের। জানা যাচ্ছে সকাল সাড়ে সাতটার সময় আগরতলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল পালের পোলিং এজেন্টকে ব্যাপক মারধর করে একদল দুষ্কৃতী। মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হচ্ছে বিজেপির দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে। তারপর আবার ১১টা নাগাদ আগরতলার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তপন বিশ্বাসকে মারধরের অভিযোগ। ভোট দিয়ে বের হওয়ার সময় মারধরের অভিযোগ। বিজেপির বিরুদ্ধো অভিযোগ। প্রার্থীর চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। কোনও রকমে পার্টি অফিসে পালিয়ে আসেন তিনি। প্রাণে রক্ষা পান। সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। এছাড়াও কোথাও হামলা, কোথাও EVM মেশিনে গড়মিল করা, কোথাও জমায়েতের মতো একাধিক অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনও তাঁদের সাহায্য করছে না। জানা যাচ্ছে, বিজেপি দলের সদস্যদের হাতে তৃণমূল কর্মীরা আহত হলে বহুবার সাহায্য চেয়ে পুলিস সুপার, ওসি এবং রিটার্নিং অফিসারদের ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁরা কেউই ফোন তোলেননি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই ২০ টিরও বেশী অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পরেও পুলিশের তরফ থকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তৃণমূল পোলিং এজেন্টদের অভিযোগ, গোটা এলাকায় বাইক নিয়ে কার্যত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিজেপি দলের কর্মী সমর্থকরা। জায়গায় জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছেন তৃনমূল এজেন্টরা। এমনকি ভোটারদের ভোট দিতে পর্যন্ত বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, পুলিশ সব দেখেও কিছুই দেখছেন না। তাঁরা একেবারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। আগরতলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বুথের বাইরে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ তুলল তৃণমূল। বিজেপি-র বিরুদ্ধেই অভিযোগ তাদের। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাইরে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি আগরতলার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বুথের সামনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ উঠেছিল। সেই জমায়েত হঠিয়ে দেন এসডিপিও-র নেতৃত্বাধীন পুলিশবাহিনী। এছাড়া ভোটগ্রহণের আগের দিন মধ্যরাত থেকে ত্রিপুরা জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবায় বন্ধ রাখার অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাল তৃণমূল। ঘাসফুল শিবিরের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে গোটা ঘটনা ঘটাচ্ছে বিজেপি। যাতে তাঁদের অত্য়াচারের ঘটনা মানুষের কাছে না পৌঁছায়, সেজন্য একাজ করেছে বিজেপি। এমনই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিক।
Hours before polling begins, @BJP4Tripura goons are threatening voters! They are preventing people from exercising their democratic rights!
Shame on BJP. State Election Commission must not remain mute spectators! We DEMAND action against such undemocratic activities! pic.twitter.com/BtJG9DdJFq
— AITC Tripura (@AITC4Tripura) November 24, 2021