মইদুল ঘটনাকে সামনে তুলে ধরে রাজ্য রাজনীতিতে বেশ দাপট দেখাচ্ছে বামেরা। যার জেরে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কার্যত লাইমলাইট হারিয়ে ফেলছে গেরুয়া শিবির। বিরোধী শক্তি হিসাবে উঠে আসছে সেই বামেরাই, যারা ৩৪ বছর বাংলা শাসন করেছে। এখন মইদুলের মৃত্যুকে কার্যত হাতিয়ার বানিয়ে তাঁরাই প্রবল পরাক্রমে ফিরে আসতে চাইছে রাজ্য রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতায় যা তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিল রাজ্যে গেরুয়া উত্থানের জেরে। মইদুলের মৃত্যু সেই হিসাবে বামেদের অনেকটাই অক্সিজেন দিয়ে দিয়েছে। এবার মইদুলের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করতে চলেছে বামেরা। শোনা যাচ্ছে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব এই মামলা দায়ের করতে চলেছে। মইদুলের মৃত্যুর পরে বামনেতা ফুয়াদ হালিম জানিয়েছিলেন, ‘মইদুলের দেহে লাঠির আঘাতের চিহ্ন ছিল। লাঠির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি, জল জমে ফুসফুসেও। মারধর ছাড়া মৃত্যুর অন্য কারণ নেই।’ কিন্তু গতকাল রাতে যে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মইদুলের হাঁটুতে আঘাত রয়েছে। তবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে সেরকম কোনও আঘাত নেই। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অবশ্য ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, মইদুলের শরীরের কোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। যদিও এই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়াও তাঁর কিডনি, লিভার, হার্ট পাঠানো হচ্ছে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য। কিন্তু এই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বামেরা। তাঁদের দাবি, ময়নাতদন্ত নিয়ে পুলিসের বয়ান সঠিক নয়। পুলিসের বিরুদ্ধেই যখন অভিযোগ যখন তখন পুলিসের তদন্ত নিয়ে সন্দিহান বাম কর্মীরা। তাই এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের সিপি-সহ একাদিক উচ্চপদস্থের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে চলেছে সিপিএম। এদিকে গতকাল কলকাতার মৌলালিতে এসএফআই দফতরের সামনে কলকাতা পুলিশের কর্তব্যরত এএসআই অভিনব দত্তের ওপর বামকর্মীদের হামলা ও মারধরের ঘটনায় বামেদের বিরুদ্ধেও এবার মামলা দায়ের করল পুলিসও। আক্রান্ত পুলিস কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০/২৫০ অজ্ঞাত পরিচয়ের বাম কর্মীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৩, ৩৩২, ৩২৪ ধারায় এফআইআর দায়ের করেছে তালতলা থানার পুলিস। একই সঙ্গে এদিন বিভ্রান্তি সামনে এসেছে বামেদের দাবি ও মইদুলের পরিবারের দাবিকে ঘিরে। বামেদের দাবি, দীর্ঘদিন বাম ছাত্রযুব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মইদুল কোতুলপুর ব্লকের গোপীনাথপুরে ডিওয়াইএফআই-এর সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু মইদুলের স্ত্রী ও বোনের দাবি, মইদুল কোনও রাজনৈতিক দলই করত না। তাঁকে ফুঁসলিয়ে নবান্ন অভিযানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এমনকি তাঁরা এটাও জানতেন না মইদুল নবান্ন অভিযানে গিয়েছে। পুলিশের মারে যে মইদুল আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সেটাও তাঁরা জানতেন না।
একই সঙ্গে মইদুলের পরিবারের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে শুধু চাকরি নয়, প্রকৃত দোষীদের শাস্তিও চাওয়া হয়েছে। যদিও রাজ্যের মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছেন, মৃত ডিওয়াইএফআই কর্মীর পরিবারের একজনকে চাকরি দিতে তৈরি রাজ্য সরকার, দেওয়া হবে আর্থিক সহায়তাও। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে তাঁর কাছে একটিই আর্জিই জানিয়েছেন মইদুলের মা এবং স্ত্রী। মইদুলের মৃত্যুর পিছনে যারা প্রকৃত দোষী, তাদের শাস্তি দিতে হবে। মইদুলের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিবারে এতজন মহিলা রয়েছে। আমরা সবকিছুর বিচার চাই। প্রকৃত দোষীর শাস্তি চাই।’ মইদুলের প্রতিবেশীরা অবশ্য দাবি করেছেন, যে কোনও চাকরি নয়। পরিবার এবং শিশুসন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পর্যাপ্ত বেতন সহ চাকরির বন্দোবস্ত করতে হবে মইদুলের পরিবারের জন্য।
এদিকে পুলিশ মইদুলের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে নেমে এখন খোঁজ নিয়ে দেখছে যে গত ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কোথায় ভর্তি ছিলেন মইদুল? কেন তাঁকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি? পুলিসেও বা খবর দেওয়া হল না কেন? কীভাবে চিকিত্সা হয়েছিল তাঁর? এখন এইসব প্রশ্নের উত্তরই জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, কেন সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে মইদুলকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হল? তার ওপরে এই ধরনের ঘটনায় স্থানীয় থানায় জানাতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ মইদুলের খবর জানানো হয় পুলিশকে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জেরা করা হবে। জানতে চাওয়া হবে, কেন তারা পুলিশকে বিষয়টি জানায়নি? ইতিমধ্যেই মইদুলের মৃত্যুর ঘটনায় বামনেতা ফুয়াদ হালিমকেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।