তৃণমূলে ঘষটা সাবান আর বিজেপিতে গেলেই সবাই সানলাইট, লাইফবয়, সার্ফ এক্সেল। বিজেপি যেন ওয়াশিং মেশিন। কালো জিনিস সব সাদা হয়ে যায়। তৃণমূলে থাকলে কালো, বিজেপিতে গেলে সাদা হয়ে যাবে। এ এক নতুন খেলা, রাণাঘাটের সভায় দাঁড়িয়ে এই ভাষাতেই বিজেপিতে যোগ দেওয়া তৃণমূলের প্রাক্তন নেতাদের তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেল-বিএসএনএল-ব্যাংক সব বিক্রি করে দিয়েছে বিজেপি। একইসঙ্গে, বিজেপিকে মিথ্যে কথা বলার রাজা বলেই অভিহিত করে বলেন, ‘মিথ্যে কথা বলার কোনও জুড়িদার নেই বিজেপির। নির্বাচনের আগে ১৫ লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল। কিছুই হয়নি। সকলকে চাকরি দেবে বলেছিল। তাও কিছু দেয়নি।’ একইসঙ্গে মমতার অভিযোগ, যেভাবে বিজেপি সব সংবাদমাধ্যমকে কিনে নিয়েছে, তাতে বিরোধীদের কোনও জায়গা নেই। কারণ, এখন টিভি খুললেই বোতল-ছিপি কিছুই দেখতে পাবেন না। শুধু বিজেপি আর বিজেপি। সারা দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের মত করে চলছে। সিবিআই-ইডি’র তল্লাশি নিয়ে একহাত নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর মন্তব্য, ‘এমনি এমনি কাগজ তৈরি করছে। সব কাগজ আদালতে হারবে। ওঁদের ভয়ে কয়েকজন বিজেপিতে গিয়েছে। তাদের ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে নিয়ে গিয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি নয়, এখন হয়ে গিয়েছে ভারতীয় জাঙ্ক পার্টি।’ কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা বিজেপিকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি করলে সাত খুন মাপ, অন্যরা করলে বন্ধ ঝাঁপ। এখন এটা একটা ভাজপা ওয়াশিং মেশিন হয়ে গিয়েছে। দিল্লি থেকে এল বাবু ফাইভ স্টার ভাড়া করে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে বাংলা দখলের। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।’ সোমবার রাণাঘাটের সভায় রাজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে যে মুখ খুলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা প্রত্যাশিতই ছিল। এদিন দুপুরে এই সভায় দাঁড়িয়ে নাগরিকত্ব ইস্যু থেকে রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আসা-যাওয়া সব নিয়েই তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মমতা। নাম না করে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডাকে তোপও দেগেছেন তিনি। রাণাঘাটের সভায় উপস্থিত কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মমতার প্রশ্ন, আপনারা সকলে ৫০-৬০ বছর ধরে রয়েছেন, তারপরেও নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। এটা চলবে না। নাগরিক মোয়া কী খাওয়াবে বিজেপি। আমার এই আইন মানি না। এই রাজ্যে মতুয়া, নমশূদ্র ভাইবোনেরা সকলেই দেশের নাগরিক। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই কথা বলে গেলাম। কাউকে কিছু প্রমাণ করতে হবে না। তিনি এনআরসি নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই অসমে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ। মোট ২৩ লক্ষ লোকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও বলছে বাঙলায় এটা করা হবে। প্রাণ থাকতে এই আইন লাগু করা যাবে না। আমরা সবাই নাগরিক। বাংলায় এনআরসি হবে না। এখানে ৫০ বছর ধরে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা কেন নাগরিক নয়, তা বিজেপিকে বলতে হবে।’ অন্যদিকে, অমিত শাহের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সোনার বাংলা তৈরি করতে কিছু বাকি নেই। সব হয়ে গিয়েছে। সোনার বাংলা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এটা বিশ্ববাংলা তৈরি হচ্ছে। আর বিজেপি এখন সোনার বাংলা তৈরি করবে। পাশাপাশি, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজ্যে আগমনকে তীব্র কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ওঁরা এসে হিমালয় ওয়াটার খাচ্ছে। তার দাম কত। আর আমি প্রাণধারা জল খাই, এটার দাম ৬ টাকা। সবার জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। জিন্দেগি এত সহজ নয়। রাস্তায় নামতে হয়। রাস্তার ধুলোয় নামতে হয়। তোমরা তা কর না। পাঁচতারা হোটেল থেকে খাবার এনে গরীবের দাওয়ায় বসে খাচ্ছে। নতুন গামছা পেতে খাচ্ছে, যাতে নোংরা না হয়। এই তে সব নেতা।’ তবে এদিনও তিনি স্পষ্ট করেছেন কারা বহিরাগত। মমতার কথায়, ‘ভোটের জন্য যাঁরা বাইরে থেকে আসছেন, তারা বহিরাগত। যাঁরা রাজ্যে থাকেন, তাঁরা বহিরাগত নয়। এই নেতারা ভোটের আগে আসেন, তারপর ফের চলে যান। তবে এই বিজেপির বাংলা ধ্বংস করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রাণ দেব, কিন্তু মাথা নোয়াব না।’