আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান কুণাল কামরা ৷ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট ৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে গাওয়া প্যারোডির জন্য মহারাষ্ট্রের খার থানার পুলিশ তাঁকে দু’দুবার সমন পাঠিয়েছে ৷ ৩১ মার্চের মধ্যে তাঁকে থানায় যেতে বলেছে পুলিশ ৷ এই পরিস্থিতিতে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় শুক্রবার সকালে রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কুণাল ৷ তিনি তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরম জেলার বাসিন্দা ৷ তাই তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টে আবেদন করেছেন ৷ এদিনই তাঁর আগাম অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট ৷ তবে আদালতের শর্ত অনুযায়ী তাঁকে তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরম জেলার ভানুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পছন্দ অনুযায়ী বন্ড জমা দিতে হবে ৷ মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি সুন্দর মোহন এই মামলায় খার থানার পুলিশকে নোটিশ পাঠিয়েছেন ৷ আগামী ৭ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷ কুণাল তাঁর আবেদনে জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালে তিনি মুম্বই থেকে তামিলনাড়ু গিয়ে বসবাস শুরু করেন ৷ তখন থেকে তিনি সেখানেই থাকেন ৷ তিনি আশঙ্কা করছেন, মুম্বই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে ৷ কুণালের পক্ষে আইনজীবী এদিন আদালতে সওয়াল করেন, মামলাকারী তাঁর ‘ন্যায় ভারত’ শীর্ষক স্ট্যান্ড-আপ কমেডিতে উপ-মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন ৷ অভিযোগ, এই মন্তব্যের ফলে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে ৷ এই অভিযোগের তদন্তে পুলিশি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই ৷ এদিকে এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে গিয়ে আগাম জামিনের আবেদনও করতে পারছেন না তাঁর মক্কেল ৷ কারণ সেই আবেদন করতে গেলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে ৷ তিনি ৫০০ টি হুমকি ফোনও পেয়েছেন বলে আদালতে জানান তাঁর আইনজীবী ৷ এই অবস্থায় বিচারপতি সুন্দর মোহন সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় দর্শিয়ে জানান, এই মুহূর্তে মামলাকারী মহারাষ্ট্রের কোনও আদালতে জামিনের আবেদন করতে পারছেন না ৷ এর জন্য প্রাথমিকভাবে তিনি যে কারণগুলি দেখিয়েছেন তাতে আদালত সন্তুষ্ট ৷ তাই 7 এপ্রিল পর্যন্ত কুণাল কামরার আগম জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত ৷ তাঁকে শুধু ভানুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বন্ড জমা দিতে হবে ৷ বিতর্কের সূত্রপাত স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান কুণাল কামরার একটি শো থেকে ৷ মুম্বইয়ের খারে হ্যাবিট্যাট কমেডি ক্লাবে তিনি একটি শো করেন ৷ সেখানে তিনি বেশ কয়েকটি প্যারোডি গান গেয়ে শোনান ৷ ওই প্যারোডিতে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক নেতার নাম করেননি কুণাল ৷ কিন্তু তাঁর রচিত একটি গান ঘিরে যাবতীয় বিতর্ক। সেখানে কারও নাম না থাকলেও এটা স্পষ্ট, তিনি একনাথ শিন্ডেকে কটাক্ষ করেই গানটি বেঁধেছেন ৷ মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা প্রধানকে ‘গদ্দার’ বলেছেন ৷ এরপর মহারাষ্ট্র তথা সারা দেশের রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায় ৷ একনাথ শিন্ডের অনুগামীরা মুম্বইয়ের ওই স্টুডিয়োতে ভাঙচুর চালায় ৷ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস কুণাল কামরাকে ক্ষমা চাইতে বলেন । এমনকী প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে একের পর এক ফোন আসে কৌতুক শিল্পী কুণালের কাছে ৷ শিবসেনা বিধায়ক মুর্জি প্যাটেল খার থানায় কুণাল কামরার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ৷ এই প্রবল চাপের মুখেও নিজের অবস্থানেই অনড় থাকেন কুণাল কামরা ৷ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কারও কাছে ক্ষমা চাইবেন না ৷ মাথা নত করবেন না ৷ এই ঘটনায় মহারাষ্ট্র পুলিশ কুণালের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর দায়ের করেছে ৷ কৌতুক শিল্পীকে 31 মার্চের মধ্যে পুলিশের কাছে এসে দেখা করতে বলা হয়েছে ৷ এবার তাঁর আগাম অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট ৷
