কলকাতা

তৃণমূলে বড় সাংগঠনিক রদবদল, এক ব্যক্তি এক পদ নীতিতে জেলা সভাপতির পদ থেকে অপসারিত একাধিক নেতা-মন্ত্রী

একুশের নির্বাচনের আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। এদিন সেটাই সামনে নিয়ে এল তৃণমূল নেতৃত্ব। ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি মেনে এদিন দলের নতুন সাংগঠনিক পদপ্রাপ্তির তালিকা প্রকাশ করে দিল তৃণমূল। আর সেখানেই দেখা যাচ্ছে সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলতে যেমন মন্ত্রীদের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে তেমনি এক একটি জেলা সংগঠনকে সুদৃঢ় করে তুলতে জেলার মধ্যে এলাকা ভেঙে নতুন সাংগঠনিক জেলা করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার মতো বড় জেলাগুলিকে ২-৩টি ভাগে ভেঙে দলের সংগঠন শক্তিশালী করে তোলার পথে পা বাড়িয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের কোনও জেলাকেই সেভাবে নতুন করে এভারে ভাগ করা হয়নি সাংগঠিক ভাবে। দার্জিলিংয়ের ক্ষেত্রে পাগাড় ও সমতল দুটি পৃথক পৃথক সংগঠন আগেও ছিল, এবারেও রাখা হয়েছে। তবে বদল আনা হয়েছে দক্ষিনবঙ্গের বেশির ভাগ জেলার ক্ষেত্রেই। মুর্শিদাবাদ জেলাকে ভাগ করা হয়েছে দুই ভাগে। জঙ্গিপুর জেলা সংগঠন ও বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ জেলা সংগঠন। নদিয়া জেলাও ভাগ হয়েছে দুইভাগে। নদিয়া উত্তর বা কৃষ্ণনগর জেলা সংগঠন ও নদিয়া দক্ষিনের রানাঘাট জেলা সংগঠন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে ভাগ করা হয়েছে ৪টি সাংগঠিক জেলায়। দমদম-ব্যারাকপুর, বনগাঁ, বসিরহাট ও বারাসত সাংগঠনিক জেলায়। কলকাতাকে ভাগ করা হয়েছে কলকাতা উত্তর ও দক্ষিন সাংগঠনিক জেলায়। দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলা সংগঠন ভাগ হয়েছে সুন্দরবন ও যাদবপুর-ডায়মণ্ডহারবার জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সংগঠনকে তমলুক ও কাঁথি এই দুই সাংগঠনিক জেলায় এবং পশ্চিম মেদিনীপুরকে ঘাটার ও মেদিনীপুর এই দুই সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করা হয়েছে। বাঁকুড়া জেলা সংগঠনকে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর এই দুই জেলায় ভাগ করা হয়েছে। হুগলি জেলা সংগঠনকে ভাগ করা হয়েছে আরামবাগ ও হুগলি-শ্রীরামপুর এই দুই সাংগঠনিক জেলায়। হাওড়া জেলা সংগঠন অবশ্য আগের মতোই হাওড়া সদর ও হাওড়া গ্রামীণ সংগঠনে বিভক্ত থাকছে। তবে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে নতুন করে কোনও সাংগঠিক জেলা তৈরি করা হয়নি।

এদিন জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি । তাঁর বদলে জেলায় চারজন সাংগঠনিক সভাপতি হয়েছেন। দমদম-ব্যারাকপুরের সভাপতি পার্থ ভৌমিক, বারাসত জেলা সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায়, বসিরহাটে সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় আর বনগাঁয় আলোরানি সরকার ।একইভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রামের সভাপতি বদল করা হয়েছে। পদ থেকে সরানো হল সৌমেন মহাপাত্র, স্বপন দেবনাথ, পুলক রায়, অরূপ রায়, দিলীপ যাদব, বেচারাম মান্না, মহুয়া মৈত্র, পার্থপ্রতিম রায় (কোচবিহার), অখিল গিরি, মৌসম নূরকে। একাধিক মন্ত্রী-সাংসদকে সরানোর পাশাপাশি দায়িত্ব পেয়েছেন প্রচুর নতুন মুখ। ভোটে ভাল ফল করার পুরস্কারও পেয়েছেন অনেকেই। কলকাতা দক্ষিণের সভাপতি পদ পেয়েছেন মণীশ গুপ্ত। পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের কংগ্রেসের সভাপতি হলেন রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ দিনাজপুরের সভাপতির দায়িত্ব পেলেন উজ্জল বসাক। শুধু রদবদল নয়, কাজের সুবিধার্থে ভাগ করা হয়েছে জেলাগুলিকে। মুর্শিদাবাদকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জঙ্গিপুরের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন কানাইচন্দ্র মণ্ডল। বহরমপুর-মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে আবু তাহের খান। তৃণমূলে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সভাপতি হলেন বিধান উপাধ্যায়, চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নদিয়া জেলাও ভাঙা হয়েছে ২ ভাগে। নদিয়া উত্তরের নতুন সভাপতি (কৃষ্ণনগর) নাসিরুদ্দিন আহমেদ। নদিয়া দক্ষিণের (রানাঘাট) সভাপতির দায়িত্ব পেলেন প্রমথরঞ্জন বোস। চারভাগে ভাগ করা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাকে। ভাগ করা হয়েছে হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনাকেও। একইভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে সৌমেন মহাপাত্রকে । সেখানে সভাপতি হয়েছেন কাঁথির তরুণ মাইতি এবং তমলুকের দেবপ্রসাদ মণ্ডল । হাওড়া গ্রামীণের সভাপতি বদল করা হয়েছে ৷ মন্ত্রী পুলক রায়কে সরিয়ে নয়া সভাপতি হয়েছেন অরুণাভ সেন । হাওড়া শহর সভাপতির পদ থেকেও মন্ত্রী অরূপ রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ উল্লেখযোগ্য হিসেবে উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি করা হয়েছে তাপস রায়কে। পাশাপাশি কলকাতা উত্তরের চেয়ারম্যান করা হল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।