কলকাতা

বাঘের বাচ্চার মতো লড়ব, নেংটি ইঁদুরকে ভয় পাই না, আপনাদের ধমকানি-চমকানি জেল-টেল ভয় পাই নাঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ভাষা দিবসের দিন রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করার পক্ষে জোর সাওয়াল করার পাশাপাশি কেন্দ্রকে বঞ্চনার প্রতিবাদে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দক্ষিন কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা দিবসের মঞ্চ থেকেই ভাষা ও বাংলাকে হাতিয়ার করে কেন্দ্র তথা বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪ বছরেও রাজ্যের নাম বদল না হওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে রীতিমতো বিঁধে মমতা বলেন, ‘আমি সব ভাষাকে ভালবাসি। কিন্তু আমি বাংলাকে ‘বঙ্গাল’ বলব কেন? আমাদের প্রথমে ‘বঙ্গাল’ বলা হল। চারবছর হল আজও রাজ্যের নাম কেন বদলাল না। যারা বাংলাকে সুড়সুড়ি দেয়, কখনও কখনও বাংলাকে গড়াগড়ি দেয়। তাঁরা কিন্তু একবারও ভেবে দেখলেন না বাংলার নামের সঙ্গে আবেগটা কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওড়িশা, মহারাষ্ট্রের ভাষা অনুযায়ী নাম হতে পারলে, বাংলা কেন নয়।’  সেই সঙ্গে ওই মঞ্চ থেকেই দৃপ্ত কন্ঠে তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘আমাকে জেলে পাঠালে বঙ্গবন্ধুর মতোই আমি জেল থেকেই বাংলার জন্য লড়াই করবো।’ রবিবার ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে নাম না করে দিল্লির নেতাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘দিল্লির নেতারা বলেছেন বাঙালিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে আমরা খুব ভাল করে জানি। আমরা বলছি, চেষ্টা করে দেখুন না। বঙ্গাল’কে ‘কঙ্গাল’ বলছে৷ বাঙালির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে ৷ এর পরই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বাঙালির মেরুদণ্ড কীভাবে ভাঙবেন দেখব ?’’মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, এতদিন তো কম চেষ্টা করোনি। আপনাদের ধমকানি-চমকানি জেল-টেল দেখিয়ে আমাদের ভয় দেখাবেন না। ভাষা দিবসের দিন আপনাদের আশ্বস্ত করছি, আমার দেহে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে আমি কোনও ধমকানি-চমকানিতে ভয় পাব না’ ‘আমার মাতৃভাষা আমাকে শিখিয়েছে, বাঘের বাচ্চার মতো লড়বি। আর বাঘ কখনও ইঁদুরকে ভয় পায় না। বাংলাকে আঘাত করতে এসো না। কারণ, বাংলার মা বোনেরা যেমন রাঁধে তেমন চুলও বাঁধে।’ যেদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে কয়লা পাচারকাণ্ডে সিবিআই নোটিস পাঠিয়েছে সেই দিনই মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য অবশ্যই তাত্‍পর্যপূর্ণ। প্রতি বছরের মতো এবারেও মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেন দেশপ্রিয় পার্কে ‘ভাষা দিবস’ এর অনুষ্ঠানে। সেখানেই তিনি এদিন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম অনেকদিন আগেই ‘বাংলা’ করার জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু চার বছর পার হয়ে গেলেও কেন্দ্র আজ অবধি এই প্রস্তাব মেনে নেয়নি। ওড়িশার নাম পরিবর্তন হলে দোষ নেই, বাংলার বেলায় এত বঞ্চনা কেন, তা নিয়ে এদিন রীতিমত সাওয়াল তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি টেনে আনেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রসঙ্গও। বলেন, ‘পাকিস্তানেও একটা পাঞ্জাব নামে প্রদেশ আছে। কিন্তু ওরা বা আমরা কী পাঞ্জাবকে পূর্ব পাঞ্জাব বা পশ্চিম পাঞ্জাব বলে ডেকে থাকি না সরকারি ভাবে তার সেই নাম রয়েছে। বাংলাদেশ তো একটা দেশ। আমরা তো বলছি না আমাদের বাংলাকে দেশ বলে স্বীকৃতি দাও। আমরা শুধু পশ্চিমবঙ্গের জায়গায় বাংলা নামটা চাইছি। এতে অপরাধ কী আছে। সবার বেলায় কোনও দোষ নেই, শুধু বাংলা চাইলেই তখন এই হবে না ওই হবে না। ওরা নাকি বাংলার মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে। আমি বলে চেষ্টাটা করেই দেখাও না। আমাকে জেলে পাঠালেও আমি বাংলার জন্য জেলের ভেতর থেকেই লড়ব বঙ্গবন্ধুর মতো।’ এদিনই মুখ্যমন্ত্রীর পুত্রসম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। সেখানে তাঁরা অভিষেকপত্নী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কয়লা পাচারকাণ্ডে জেরা করতে চেয়ে নোটিশ দিয়ে আসেন। একই সঙ্গে অভিষেকের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকেও এদিন তাঁদের আনন্দপুরের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিয়েছে সিবিআই। ঠিক সেই ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর জেলের ভেতর থেকে লড়াই করার চ্যালেঞ্জ রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলে দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী এদিন কার্যত নাম না করে বিজেপি ও সিবিআইকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে তাঁকে ভুয়ো অভিযোগের ভিত্তিতে যদি কেউ জেলেও ভরে দেয় তাহলেও তিনি ‘বাঘের বাচ্চা’র মতোই লড়াই করবেন। আর তাঁর সেই লড়াই বাংলার জন্য বাঙালির জন্য। তাঁর দাবি, ‘আমাকে এই বাংলা শিখিয়েছে বীরের মতো লড়বি। বাঘের বাচ্চার মতো লড়বি। বাঘের বাচ্চা যেন বিড়ালকে দেখে ভয় না পায়’।