জেলা

‘রাবণ-দানব মিলে দেশ চালাচ্ছে, ঘরের বউকে কয়লা চোর বলছেন, আর কয়লা চোরেদের নিজেরা কোলে করে ঘুরছেন’, মোদিকে তোপ মমতার

হুগলীর ব্যান্ডেলের কাছে সাহাগঞ্জে ডানলপ ময়দানে এক বিশাল জনসভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৮ ঘন্টা আগেই এই মাঠে জনসভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলার অনুন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করে তোপ দেগেছিলেন মোদি। আর আজকের সভার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিলেন মনোজ তিওয়ারি। সঙ্গে যোগ দিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, অভিনেত্রী জুন মালিয়া, অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, অভিনেত্রী মানালি দে, অভিনেত্রী চৈতালী দাশগুপ্ত, অভিনেত্রী সুদেষ্ণা রায় প্রমুখ। কার্যত লাখো মানুষের ভিড়ে এই সব তারকার যোগদান এদিন ডানলপের মরা মাঠে জোয়ার নিয়ে আসে। হুগলির এই বিশাল জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন “গুজরাত বাংলা শাসন করবে না। খেলা তো হবেই। খেলা একটাই হবে একুশের নির্বাচনে। একদিকে থাকবে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূল। আমি থাকবো গোলকিপার। একটাও গোল বারপোস্টে ঢুকবে না। সব ওপর দিয়ে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী এই মাঠেই সবা করেছে গত পরশু। উনি চালাকি করেন। ট্রান্সপারেন্ট কাঁচ লাগিয়ে বলেন সব। একলাইন বাংলা বলে বাঙালির মন জয় করা যায় না। ভালোবাসতে হয়। আমি তো না দেখেই সব বলি।” মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, জেপি দলের মা-বোনেরা সব সুরক্ষিত? উত্তরপ্রদেশ-গুজরাট, মধ্যপ্রদেশে সব অরক্ষিত, আর বলছে বাংলার কথা। ভাবা যায় দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলছেন।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, “এদেশে এখন দুটো নেতা, একটা হোঁদল কুতকুত। আরেকটা কিম্ভূতকিমাকার। আমি এর ইংরেজি, হিন্দি জানি না। আমার উপর বিজেপির খুব রাগ। ওরা আমাকে মারতে-খুন করতে পারে। ওরা সব পারে। ঘরে ঢুকে বাইশ-তেইশ বছরের এক বউ, ঘরের কন্যাকে কয়লা চোর বলছে। আর কয়লা চোরেদের নিজেরা কোলে করে ঘুরছেন। আমার বাড়ির মা-বোনেরা কয়লা চোর? তোমার সারা গায়ে ময়লা। নোটবন্দির ময়লা। সেই টাকা কোথায় গেল নরেন্দ্র মোদি জবাব দাও। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্করি হচ্ছে কেন, জবাব দাও”। তিনি আরও বলেন, “এই সায়নী, এখন এখানে এসেছে। একটা টুইট করেছিল। তাই নিয়ে কত অপমানই না করেছে তাঁকে। একটা মেয়ের স্বাধীনতা থাকবে না? দেবলীনার টুইট নিয়ে ওঁকেও কী ভাবে অপমান করেছে? আজকে বিজেপি-তে মেয়েরা সুরক্ষিত নয়।” “২০১৪ সালে ডানলপ অধিগ্রহণ করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। তখন করতে দিল না। এটা কেন এখনও বন্ধ। সভার আগে প্রধানমন্ত্রীর জবাব দেওয়া উচিত ছিল। ডানলপের মালিক পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে এত কেস। তা সত্ত্বেও তাঁর শরৎ বোস রোডের বাড়িতে কেন বিজেপি নেতারা থাকেন?” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তৃণমূলকে কথায় কথায় তোলাবাজ বলেন উনি, তাহলে বিজেপি কী? সবচেয়ে বড় দাঙ্গাবাজ-ধান্দাবাজের দল। মোদি মিথ্যা বলছেন। দরিদ্র দূরীকরণে বাংলা এক নম্বর। একশো দিনের কাজ-দক্ষতা বাড়ানোর কাজে বাংলা এক নম্বর। দেড়-দু কোটি মানুষকে বাংলা চাকরি দিয়েছে।” গত সোমবার নোয়াপাড়া-‌দক্ষিণেশ্বর মেট্রো উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সঙ্গে রেলের একাধিক লাইনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই নিয়েই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা সভায় ওই ডানলপের মাঠ থেকেই মেট্রো-‌রেল প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ শানালেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‌আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, সেই সময়েই গড়িয়া-‌নোয়াপাড়া মেট্রো প্রকল্প হয়েছিল। আমিই নোয়াপাড়া-‌দক্ষিণেশ্বর মেট্রো প্রকল্প ঘোষণা করেছিলাম, এখন প্রধানমন্ত্রী এসে শুধু ফিতে কাটছেন’‌। রেলের একাধিক প্রকল্প তাঁর আমলেই শুরু হয়েছিল বলে এদিন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসব করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি আরও বলেন, ‘‌প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে কথা বলছেন, বলতে চাই না। কারণ উনি আজকে আছেন, কালকে থাকবেন না। আমি পদটাকে সম্মান করি’‌। এছাড়াও এদিনের সভা থেকে, রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি কিছুই করে না, শুধু দাঙ্গা লাগায় বলে কটাক্ষ করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এদিন গর্জে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।