বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয়বার শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয়বার শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তন্ময় উপাধ্যায়, কলকাতাঃ আজ ঘড়ির কাঁটাতে ১০টা ৪৫ মিনিট বাজতেই রাজভবনের থ্রন হলে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। করোনা পরিস্থিতিতে কথা মাথায় রেখে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই শপথ গ্রহণ পর্ব শেষ করা হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন ৫০ জন বিশিষ্ট অতিথি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সুব্রত বক্সী, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, দেব ও প্রশান্ত কিশোর। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধীদলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এদিন শুধুমাত্র উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের তরফে সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। ছিলেন রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন দূতাবাসের আধিকারিকরা। এদিন সকাল দশটা নাগাদ কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি পৌঁছে যান রাজভবনে। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্র সচিব সহ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলারা। সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নির্দিষ্ট চেয়ারে গিয়ে বসেন। ১০টা ৪৪ মিনিট নাগাদ রাজভবন হলে এসে পৌছল রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকর। রাজ্যপালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে মুখ্যমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। শপথ নেওয়ার পর একটি সংক্ষিপ্ত চা-চক্রে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী। রাজভবনে শপথ গ্রহণের পর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে জোর দেন। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দেন, রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে তিনি কোনো রকম আপস করবেন না। সব রাজনৈতিক দলের কাছে তিনি আবেদন রাখেন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও অশান্তি যাতে না হয় সেই দিকে নজর রাখাতে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তার হাতে ছিল না। তিন মাস এই দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের। তাঁর ফলে নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্যের প্রশাসনিক স্তরে যে সব রদবদল করা হয় তার জন্যই এই বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাও কাম্য নয়। বাংলা কোনো অশান্তি পছন্দ করে না। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে তিনি কঠোরভাবেই তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।’ তিনি দায়িত্ব নিয়েই প্রশাসনিক স্তরে দায়িত্ব পালন করার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। রাজ্যপাল তাঁর ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানিয়ে তাঁকে ছোটবোন সম্বোধন করে আশা ব্যক্ত করেন যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা বাংলার নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককেই আমার ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের প্রথম কাজ কোভিডকে নিয়ন্ত্রণ করা। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ কোভিড নিয়ে মিটিং ডাকা হয়েছে। কী করা হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বৈঠকে। ৩টের সময় প্রেস মিট করে তা জানিয়ে দেব। নবান্নে গিয়ে এই কাজটাই করতে চাই। সব রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন করব, শান্তি বজায় রাখুন। বাংলা অশান্তি পছন্দ করে না। আমি নিজেও করি না। কোথাও কোথাও হিংসা হচ্ছে। আমি আজ থেকে আইন শৃঙ্খলা দেখছি। যেখানে যেখানে পোস্টিং করার করে, তা নিয়ন্ত্রণ করব। কোথাও অশান্তি হলে পদক্ষেপ করতে পিছপা হবে না।” মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া পর আশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।এরপর তিনি রাজভবন ছেড়ে নবান্নের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীকে কলকাতা পুলিশ ব্যান্ডের তরফের গার্ড অফ অনার জানানো হয়। গার্ড অব অনার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি তার সচিবালয়ের চৌদ্দতলা নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে বসেন। তার পরই তিনি শুরু করেন রাজ্যের করোনা মহামারী রোধ করা নিয়ে রাজ্যের সচিবদের সঙ্গে ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক।