হিংসা কবলিত মণিপুরে উন্মত্ত জনতার হাতে হেফাজতে থাকা ১২ জন উগ্রপন্থীকে তুলে দিল সেনা। বলা ভালো একপ্রকার বাধ্য করা হল তাদের। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল, মণিপুরের ইথাম গ্রামে। গোপন সূত্রে ভিত্তিতে খবর পেয়ে ইম্ফল জেলার ওই গ্রামে অভিযানে গিয়েছিল সেনা। বিপুল অস্ত্রশস্ত্র সমেত কাংলেই ইয়াওল কান্না লুপ নামের একটি সংগঠনের ১২ জন সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু গ্রামের উন্মত্ত জনতার চাপে শেষমেশ তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সেনা। উল্লেখ্য, জঙ্গিদের ছাড়াতে আসা এই উগ্র ভিড়ের অগ্রভাগে ছিলেন মহিলারা। এই ঘটনার জেরে মণিপুরের পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ফের একবার প্রকাশ্যে চলে এল। সেনা জানিয়েছে, সেনার অভিযানের খবর পেয়েই তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ১২০০ থেকে ২ হাজার জন গ্রামবাসী। একজন স্থানীয় নেতা এবং মহিলাদের নেতৃত্বেই চলে এই বিশেষ অভিযান। সেনার তরফে গ্রামবাসীদের লাগাতার অনুরোধ সত্বেও কোনও কাজ হয়নি শেষমেশ ১২ জন উগ্রপন্থীকে জনতার হাতে তুলে দিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের। ভিড়ে এত সংখ্যক মানুষ উপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনও রকম বল প্রয়োগ করতে পারেনি সেনা। আর এই সিদ্ধান্তকে যথাযথ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এতবড় ভিড়ের উপর অস্ত্র প্রয়োগ করলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারতো। প্রাণের ঝুঁকি ছিল সেনার জওয়ানদেরও। এছাড়াও স্থানীয়দের কোনও ক্ষতি হলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারতো মণিপুর। তবে ১২জন বন্দিকে হস্তান্তরের পর এলাকা ছাড়ার আগে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলিকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে আসতে পেরেছে সেনা। ধৃতদের মধ্যে একজন সেনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই ব্যক্তির নাম মইরাংথেম তাম্বা। মণিপুরের এই উগ্রপন্থী এর আগে ঘটা একাধিক নাশকতার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাকে কবজায় পাওয়ার পরও ছেড়ে দিতে বাধ্য হওয়ার জন্য আফসোস করছে সেনা। বাহিনীর অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, মণিপুরে অশান্তির মূলে এখনও ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছেন তাম্বার মতো এই ধরণের উগ্রপন্থী নেতারা। তাই তাকে ছাড়াতেই আঁটঘাট বেঁধে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে আজকের এই ঘটনার পর ফের একবার পরিষ্কার হয়ে গেল, মণিুপুরে শান্তি এখনও বহু দূরে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে দাবিই করুক না কেন, উত্তরপূর্বের এই আগুন নেভাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ তারা। মণিপুরের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আগে যেই তিমিরে ছিল, এখনও রয়েছে সেই তিমিরেই।